আলোর পথে স্বপ্নময় হাইটেক পার্ক
ঢাকা: দুই যুগ পর আলোর দেখা পেতে যাচ্ছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক। দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার নির্মীয়মাণ পার্ক এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এমনই আশাবাদের কথা জানালেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
মন্ত্রীর পরিদর্শনের সময় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান, লিভারেজিং আইসিটি প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম, যুগ্ম সচিব ও কনসালটেন্ট আবুল কালাম আজাদ, বিক্রম দাস গুপ্ত, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নাছরিন আলম সাথী এবং সাপোর্ট টু কালিয়কৈর হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক আ ন ম শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পার্কের কাজের অগ্রগতি এবং দীর্ঘদিনেও আলোর মুখ দেখতে না পারার বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সাপোর্ট টু কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী।
এ সময় দ্রুততম সময়ে হাইটেক পার্ক চালু করতে বিদ্যমান মামলাজট খুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান জুনাইদ আহমেদ। মন্ত্রী জানান, আইনি জটিলতা নিরসনে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলাপ করবেন তিনি।
জুনাইদ আহমেদ বলেন, “আশা করছি স্বল্পতম সময়েই হাইটেক পার্ক আইসিটি আয়না হিসেবে দাঁড় করাতে পারব। এখানে হালনাগাদ সব প্রাযুক্তিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।
দেশী-বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেন এখান থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার যাতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হবে।
দীর্ঘ দুই যুগে হাইটেক পার্ক আলোর মুখ না দেখায় এবং সরকারের গত মেয়াদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে না পারায় এবার মন্ত্রী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূ্ত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ১৭ জুলাই হাইটেক পার্ক গঠনের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার। ২০০৪ সালে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে হাইটেক পার্কের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রায় ২৩২ একর জায়গা হস্তান্তর করে ভূমি মন্ত্রণালয়।
হাইটেক পার্কের জায়গাটা আগে ছিল তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের। জায়গা বুঝে পেয়েও পার্কের মূল অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করতে সরকারের লেগে যায় আরো দুটি বছর। অবশেষে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে হাইটেক পার্কের মূল অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করে সরকার।
ইতিমধ্যে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্কে তৈরি হয়েছে মূল প্রশাসনিক ভবন, গেটওয়ে, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র, টেলিফোন সাব এক্সচেঞ্জ, গভীর নলকূপসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। সেই সঙ্গে বিটিসিএলের সহায়তায় নিশ্চিত হরা হয়েছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ।
উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ঢাকা থেকে সহজেই যাতায়াতের জন্য একটি শাটল ট্রেন চালুর। মূল প্রশাসনিক ভবন ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা এখনই ব্যবহার উপযোগী। গ্যাস, পানিসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই রয়েছে সেখানে।
এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করতে পার্কের অদূরে একটি ৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে দেয়াল দিয়ে ঘেরা বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠছে এই হাইটেক পার্ক।
ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ২৩২ একর জায়গায় পাঁচটি ব্লকে ভাগ করা হাইটেক পার্ক এলাকার বড় বৈশিষ্ট্য হলো, যেখান থেকে চট্টগ্রাম, খুলনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ অনেকটাই সহজ।
এত কিছু হওয়ার পরও মামলাজট আর যথাযথ দৃষ্টি না দেয়ায় দুই যুগেও আলোর মুখ দেখেনি স্বপ্নময় এই প্রকল্প।