‘আমার স্বামী বাংলাদেশে নিরাপদ নন’
‘আমার স্বামী বাংলাদেশে নিরাপদ নন’
আমার স্বামী বাংলাদেশে নিরাপদ নন। আমি তাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারবো না। বরং আইনি সুযোগ থাকলে আমি তাকে যত দ্রুত সম্ভব সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে চাই। সেখানেই গত কয়েক বছর ধরে তার হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার চিকিৎসা করা হচ্ছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এসব কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, এতোদিন তিনি কোথায় ছিলেন আমি তা জানিনা, তিনি কিভাবে শিলং পৌঁছালেন সেটাও জানিনা। তবে আমি খুশি যে তিনি এখানে নিরাপদ আছেন। আর এখানে তার ভালো দেখাশোনা করা হচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে নেইগ্রিমস হামপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মেঘালয়ের পুলিশ সদস্যরা তাকে ২৪ ঘণ্টা প্রহরা দিয়ে রাখছে। বিদেশী নাগরিক আইন লঙ্ঘনের মামলায় ২৯শে মে আদালত পুলিশকে রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে হাসিনা আহমেদ আরও বলেন, আমার স্বামী অনেক অসুস্থ। তার হার্টে তিনটি রিং রয়েছে। আর তার বাম কিডনি ঠিক মতো কাজ করছে না। আমি বলছিনা যে এখানে তার ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। কিন্তু সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল তার রোগের ইতিহাস জানে। তারা প্রায় ২০ বছর ধরে তার চিকিৎসা করে আসছে। আর এখন যদি আমি তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাই, তাহলে আমি জানি না কি ঘটবে।
ঢাকা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দু’মাস পর শিলংয়ে খুঁজে পাওয়া যায় সালাহউদ্দিন আহমেদকে। ১২ই মে শিলংয়ের গলফ লিঙ্কস এলাকায় উদভ্রান্তের মতো তাকে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে জানান। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে সালাহউদ্দিন জানান, তিনি বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। তবে কিভাবে তিনি মেঘালয়ে পৌছেছেন সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন নি। রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর শিলংয়ে রহস্যজনকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্নের উদয় হয়। এতোদিন কোথায় ছিলেন। কিভাবেই বা শিলং পৌছুলেন। এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। নেইগ্রিমস হামপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট অনিল ফুকানের কাছ সালাহউদ্দিন আহমেদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার সময়ের ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করে হাসিনা আহমেদ বলেন, ১১ই মার্চ আমার কাছে খবর আসে, আগের দিন তিনি উত্তরায় এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর কিছু মানুষ তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। অনেকে বলেছে, তার গুম হওয়ার সময় সরকারী সংস্থার একাধিক যানবাহন দেখা যায়। আমি জানি না কে বা কারা কেন তাকে গুম করেছিল। হাসিনা আহমেদ আরও বলেন, আমি প্রথমে গুলশান থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ সেখানে জিডি করতেও অস্বীকৃতি জানায়। তারা আমাকে উত্তরা যেতে বলে। উত্তর থানা থেকে আমাকে বলা হয়, স্বাক্ষী হাজির করা ছাড়া তারা এফআইআর লিপিবদ্ধ করতে পারবে না। পরদিন, আমি হাইকোর্টের শরনাপন্ন হই। হাইকোর্ট আমার স্বামীকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে প্রতি মাসের প্রথমে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বার বার আবেদন জানিয়েও কোন জবাব না পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দুটো আবেদন পাঠালেও আমার জন্য একটু সময় বের করতে সক্ষম হন নি প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও আমি পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে যাই। কিন্তু সেখানেও কোন জবাব মেলেনি।
এদিকে, ঢাকার গণমাধ্যমের রিপোর্টে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে উদ্বৃত করে বলা হয়েছে, সালাহউদ্দিন আহমেদকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং বিএনপির হরতাল অবরোধের সময় সহিংসতা উস্কে দেয়ার অভিযোগে বিচার করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রিধারী সালাহউদ্দিন আহমেদ সরকারী কর্মকর্তা থাককালীন ১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টানা দুবার কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকারে যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিলংয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে পাওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে যেসব বিএনপি নেতৃবৃন্দ তার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে গেছেন তাদের মধ্যে একজন বলেন, ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকার বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাকে কারাগারে পাঠায়ে। তার মধ্যে একজন ছিলেন সালাহউদ্দিন। তাকে দু বছর পর মুক্তি দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে ২০০৮ সালে তার স্ত্রী কক্সবাজার থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত কয়েক বছরে কমপক্ষে ২৪ টি মামলায় সালাহউদ্দিন আহমেদের নাম দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২০১৩’র এপ্রিলে।