আবার জেগেছে শাহবাগ-সাকার রায় ঘোষণা পর্যন্ত অবস্থান
স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও জেগেছে শাহবাগ। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান করবে গণজাগরণ মঞ্চ। সোমবার গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের একথা জানান। সন্ধ্যা সাতটা থেকে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী শুরু হয়। সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-সহ ৬ দফা দাবিতে সাত মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে প্রজন্ম সেনারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে সাকা চৌধুরীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্য সাকার বিরুদ্ধে। এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার রায়ের জন্য মঙ্গলবার ঠিক করে দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়াররুল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১৪ আগস্ট যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটি হবে সপ্তম রায়। এই প্রথম কোন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় হতে যাচ্ছে।
২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর গত বছরের ৪ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তার বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। এর আগে ট্রাইব্যুনালের ৬টি রায়ে জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান ছয় নেতাকে দোষীসাব্যস্ত করে দ-াদেশ দেয়া হয়।
সন্ধ্যার আগে থেকে প্রজন্ম চত্বরে জমা হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হয় একটি কথাই- তা হলো ‘সাকার ফাঁসি চাই, দিতে হবে।’ সন্ধ্যার পর ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে শাহবাগ। রাস্তায় বসে চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেøাগান। এসময় প্রজন্ম সেনারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি নিয়ে আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সকল যুদ্ধাপরাধীর কাক্সিক্ষত বিচার না হবে ততক্ষণ আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। দেশের বেশিরভাগ মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। তরুণ সমাজের সরাসরি সমর্থন রয়েছে এ বিচারে। তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আদালত দেশের সকল মানুষের কথা বিবেচনায় নেবেন। তাছাড়া সাকা চৌধুরীর মতো একজন কুখ্যাত ঘাতকের ফাঁসি ছাড়া আর কোন রায় মানুষ চায় না।
গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসুল জনকণ্ঠকে বলেন, সন্ধ্যা সাতটা থেকে অবস্থান কর্মসূচী শুরু হয়েছে। রাতভর চলবে। সকাল ১০টা থেকে রায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগে অবস্থান করব। কাক্সিক্ষত রায় না পেলে পরবর্তীতে নতুন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। মারুফ বলেন, সাকা চৌধুরী একজন নৃশংস রাজাকার। আমাদের প্রত্যাশ্য একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আদালত তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাহবাগে সাইবারযুদ্ধ পেজে লেখা হয়- ‘আগামীকাল মঙ্গলবার কুখ্যাত রাজাকার সাকার রায়। একাত্তরে রাউজানে কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার পর এ নিয়ে মামলাও হয়। এছাড়া ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা, লুট, অপহরণ, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আছে এই ডাকুর নামে। এখন শুধু কলঙ্ক মোচনের অপেক্ষার পালা।’
ডা. ইমরান এইচ সরকার তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘আগামীকাল কুখ্যাত রাজাকার সাকার রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাকা চৌধুরীর মতো গণহত্যাকারী, কুলাঙ্গারের বিচারে এদেশের প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশিত রায় ‘সর্বোচ্চ শাস্তি। প্রজন্ম যোদ্ধারা আজ সন্ধ্যা থেকেই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান গ্রহণ করবে। আগামীকাল সকাল থেকে রায় ঘোষণা অবধি আমাদের অবস্থান চলবে। আমি গণজাগরণ মঞ্চের সকল প্রজন্ম যোদ্ধাদের অনুরোধ করব সকল ভেদাভেদ ভুলে দল-মত নির্বিশেষে আমাদের মূল লক্ষ্য, সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে কাজ করে যেতে। জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা।’