আবারও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, কাশ্মিরে গুলি বিনিময়, নিহত ১০

23/11/2016 1:25 pmViews: 7

আবারও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, কাশ্মিরে গুলি বিনিময়, নিহত ১০

 

আবারও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনে ভারতের তিনজন সেনা সদস্য সন্তাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন বলে ভারত দাবি করছে। এর মধ্যে একজনের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ওই সেনা সদস্যের নাম প্রভু সিং (৩১)। তার বাড়ি রাজস্থানের যোধপুরে খিরজানখাস গ্রামে। নিহত অন্য দু’ সেনা সদস্য হলেন উত্তর প্রদেশের গাজিপুর জেলার মনোজ কে কুশওয়াহ ও শশাঙ্ক কে সিং। ভারত এর বদলা নেয়ার হুমকি দেয়। এর পরই পাকিস্তান বলছে, আজ বুধবার ভারতীয় সেনারা প্রচ- গোলা নিক্ষেপ করেছে। এতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৪ জন। এ সময় ভারত ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে তীব্র গুলি বিনিময় হয়। তা অব্যাহত ছিল। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন জি নিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের অনলাইন ডন। ডন লিখেছে, নীলম ভ্যালির এসপি জামির মির বলেছেন, লাওয়াত শহরে যাত্রাবাহী কোস্টারে ভারতীয় সেনারা ছোট ও ভারি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে কমপক্ষে ৯ জন আরোহী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ জন। এ সময় কোস্টারটি যাচ্ছিল মুজাফফরাবাদের দিকে। ডিস্ট্রিক্ট হেডকোয়ার্টার্স হসপিতাল আথমুকামে নেয়া হয়েছে চারটি মৃতদেহ ও আহত ১১ জনকে। তখনও আক্রমণের শিকার কোস্টারে পড়ে ছিল ৫ জনের মৃতদেহ। তিনি আরও বলেছেন, নীলম ভ্যালিতে গোলা নিক্ষেপ শুরু হয় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে। কিন্তু সকালের দিকে হামলা জোরালো করে ভারতীয় সেনারা। অন্য এলাকার কর্মকর্তারাও একই কথা বলেছেন। কোটলির নাকিয়ালে সহকারী কমিশনার সরদার জিসান নিসার বলেছেন, আমার এলাকায় গোলা নিক্ষেপ শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় আজ বুধবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে। বৈষম্যমুলকভাবে তা চলতেই থাকে। স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে আহত চারজনকে। তবে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাস্থলে আরও হতাহত পড়ে থাকতে পারেন। কিন্তু ওই এলাকায় অব্যাহতভাবে গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। কোটলি জেলার টাট্টা পানি সেক্টরেও গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে সেখানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায় নি। পুঞ্চ জেলার মাদারপুর সেক্টরের বাত্তাল এলাকার লোকজন জানিয়েছে সেখানেও প্রচ- ভারি গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। সেখানে কিছু মানুষ আহত হয়েছেন বলে শোনা গেছে। কিন্তু এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। পাকিস্তানের সামরিক সূত্র বলেছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতের এমন হামলার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, বুধবার নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে নীলম ভ্যালিতে একটি বেসামরিক বাসে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনারা। তাতে কমপক্ষে চারজন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছেন। কোনো প্ররোচণা ছাড়াই ভারতীয় সেনারা শাহকোট, জুরা, বাত্তাল, কারেলা, বাগ, বাগসর, হটস্প্রিং সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় গুলি ও গোলা নিক্ষেপ করেছে। তারা বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোস্ট লক্ষ্য করে পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছুড়লে পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ওই গুলি বিনিময় চলছিলই।
এর আগে মঙ্গলবার ভারতীয় সেনারা দাবি করে, নিয়ন্ত্রণ রেখায় তাদের তিনজন সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তারা এর বদলা নেয়ার হুমকি দেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়, নিহতদের একজনের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। এর জন্য তারা পাকিস্তানকে দায়ী করে। কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানকে হেয় করার জন্য এটা একটি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। জি নিউজ লিখেছে, ভারতের তিন সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর মঙ্গলকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরকে জানিয়েছেন ভারতের সেনাবাহিনীর উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়াত। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এ হত্যাকান্ডে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জড়িত। ওই তিন সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে মাছিলে নিয়ন্ত্রণ রেখায়। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এম নাফিস জাকারিয়া ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পাকিস্তানি সেনারা ভারতের কোনো সেনার শিরñেদ করে নি। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরে কাশ্মিরের উরি এলাকায় ভারতীয় সেনাদের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। সেখানে ১৯ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সেপ্টেম্বর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারত তারপর পাকিস্তানের ভিতরে প্রবেশ করে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে বলে দাবি করেছে। এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান। তারা বলেছে, এ সময়ে দু’পক্ষের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণ রেখায় মাঝে মাঝেই গুলি বিনিময় ঘটছে। এতে সামরিক বা বেসামরিক মানুষের প্রাণহানী ঘটছে।

Leave a Reply