আন্দোলনে অচল পলিটেকনিক, মঙ্গলবার সচিবালয় ঘেরাও

29/09/2013 5:07 pmViews: 22

comilla clash-01প্রতিবেদক : দুই দফা দাবিতে ১ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। গেজেট সংশোধন এবং শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণের ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রবিবারও অব্যাহত ছিল। এ সময় ঢাকা পলিটেকনিকে তালা দিয়েছে, আর কুমিল্লায় ইউএনও’র গাড়িতে আগুন শিক্ষার্থীরা দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষসহ গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ পটুয়াখালী ও রংপুরে ২৯ জনকে আটক করেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো।

প্রকৌশলীর সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করে ২০০৮ সালের বিতর্কিত গেজেট সংশোধন এবং ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ ভাতা বাড়ানোর দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন। রবিবার সকাল ১০টা ও বেলা দুইটা থেকে শেষ বর্ষসহ বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেননি।

এরফলে দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা ছেড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গড়িয়েছে রাজপথে। চলছে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগের সময় ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলেও চার বছরের ডিপ্লোমাধারীদের নিয়োগের সময় ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয় না। সিলেবাসে চার বছর ধরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেও তাদের অবমূল্যায়নের শিকার হতে হচ্ছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০০৮ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে, সেখানে ইঞ্জিনিয়ারদের সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে দেশের ৪৯টি সরকারি ও ৩৫৭টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারদের সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নাম অন্তর্ভুক্তকরণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে করিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শাহজাহান মিঞা বলেন, ডিপ্লোমাধারীদের ইনক্রিমেন্টের বিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানা হয়েছে। বিষয়টি এখন অর্থমন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন। অন্যান্য দাবিও দ্রুত বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ‍ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে জানান শাহজাহান মিঞা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) মো. আতোয়ার রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবি দিয়েছে সরকার তা নিয়ে কাজ করছে। এসব কাজ একদিনেই হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য একটু সময় দিতে হয়।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা সরকারকে সময় দিতে নারাজ। তারা বলছেন, গত আড়াই বছর ধরে আন্দোলন হচ্ছে। আর এখন রাজপথে আন্দোলন করার কারণে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারকে দাবি বাস্তবায়নে সময় দিতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার রাজধানীসহ সারা দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে শিক্ষার্থীদের।

ঢাকার সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে সকাল আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর-১০, মহাখালী, শ্যামলী ও তেজগাঁও এলাকায় বিক্ষোভ করেন। বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদের (বাকাছাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ‘প্রকৌশলী’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া ও অন্যান্য পেশার সঙ্গে বেতনবৈষম্য দূর করার দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। তিনি জানান, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা টেক্সটাইল প্রকৌশলীরা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সময় মাসে ১১ হাজার টাকা ভাতা পান, কিন্তু তাঁরা পান ৫০০ টাকা। এ বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে সরকারকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এদিকে এসব ঘটনায় সকাল থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে সকালেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দেন। ইনস্টিটিউট ও ছাত্রাবাসগুলো পুলিশ ঘিরে রেখেছে।

কোটবাড়ি সড়ক এলাকায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সকাল নয়টা থেকে কাঠের গুঁড়ি ও বালুভর্তি বস্তা ফেলে কুমিল্লা-কোটবাড়ি সড়ক অবরোধ করে রাখেন। ওই সময় পুলিশ বাধা দিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে কোটবাড়ি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা জাহানের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁরা বিজয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি অফিসে হামলা চালিয়ে কাগজপত্র তছনছ করে তাতে আগুন দেন। সংঘর্ষে ১০ জন পুলিশসহ ২০ জন আহত হন।

এদিকে, পরীক্ষা বর্জন করে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পটুয়াখালীতে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংর্ঘষ চলে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন এবং ক্যাম্পাসের বাইরে বেশকিছু অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশসহ অর্ধশত লোক আহত হন। এখন পর্যন্ত পুলিশ ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে। পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হাসান মো. কামরুজ্জামান জানান, রবিবার সকালের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেননি। এখন ক্যাম্পাস কিছুটা শান্ত।

সকাল আটটা থেকে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রীরা পরীক্ষা বর্জন করে ইনস্টিটিউটের বাইরের গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ছাত্রীদের লাঠিপেটা করে। এতে অন্তত ২০ জন ছাত্রী আহত হন। শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্রীরা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। হলে পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। এ কারণে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকা হয়েছে। এতে ভয়ে ছাত্রীরা পালিয়ে যান।

বগুড়ায় রুটিন অনুযায়ী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সকাল ১০টায় কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে উপস্থিত হলে খাতা ও প্রশ্নপত্র বিতরণ শুরু হয়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলের বাইরে থেকে ব্যাপক ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পরীক্ষার্থীরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভাঙচুর শুরু করলে পরীক্ষা পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংর্ঘষ বাধে। শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের সামনে সাতমাথা-শেরপুর সড়ক অবরোধ করে বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় চার ছাত্রকে আটক করা হয়। বেলা একটার দিকে টিএমএসএস পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ গিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে শহরের পায়রা চত্বরে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা শহরের যমুনা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও ভরসা টাওয়ারে ইটপাটকেল ছুঁড়ে কাচ ভাঙচুর করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করে। এতে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ১৭ জনকে আটক করেছে। শহরে ১২টি মাইক্রোবাস-অটোরিকশা ও তিনটি ভবনের জানালার কাচ ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা।

Leave a Reply