আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ের বিয়ে নিয়ে গুজব! নুরুল ইজ্জাহ বলেছিলেন, মালয়েশিয়ার ভবিষ্যতকে নতুন করে সাজাতে চাই।  আামি আমার পিতার দীর্ঘদিনের আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। মালয়েশিয়ার তরুণদের এই অনুভূতি আছে যে, তারা নিজেকে মালয়েশিয়ার ভবিষ্যত নির্মাণের অংশ মনে করে। 

24/02/2020 5:26 pmViews: 5

আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ের বিয়ে নিয়ে গুজব!

আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ের বিয়ে নিয়ে গুজব! – সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার ১৫তম রাজা সুলতান পঞ্চম মোহাম্মদকে বিয়ে করার খবর গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দেশটির সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরুল ইজ্জাহ। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিয়ের গুজব ছড়িয়ে পড়লে নুরুল ইজ্জাহ তা অস্বীকার করেন।

দা স্টার পত্রিকার পক্ষ থেকে এ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার পিকেআর দলের ডি ফ্যাক্টো নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নূরুল ইজ্জাহ আনোয়ারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তা ভুয়া বলে নাকচ করে দেন।

পিপলস জাস্টিস পার্টির এ ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, দয়া করে এসব ভুয়া খবরের প্রচার শুরুতেই বন্ধ করে দেন। তার চেয়ে বরং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে বাঁচাতে সবাই হাতে হাতে কাজ করার বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করেন।

গত বৃহস্পতিবার নুরুল ইজ্জাহর বাবা আনোয়ার ইব্রাহিম ও ড. ওয়ান আজিজাহ ইসমাইল সুলতান পঞ্চম মোহাম্মদের মায়ের সাথে দেখা করেন।

তারা প্রায় একঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এর পরই নুরুল ইজ্জাহর বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছিল, মেয়ের বিয়ে নিয়ে কথা বলতেই তারা সেদিন সুলতানের মায়ের সাথে দেখা করেছেন।

নুরুল ইজ্জাহ বলেছিলেন, মালয়েশিয়ার ভবিষ্যতকে নতুন করে সাজাতে চাই।  আামি আমার পিতার দীর্ঘদিনের আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। মালয়েশিয়ার তরুণদের এই অনুভূতি আছে যে, তারা নিজেকে মালয়েশিয়ার ভবিষ্যত নির্মাণের অংশ মনে করে।

তিনি আরো বলেছিলেন,  গণতন্ত্রে সবাই যদি প্রধানমন্ত্রী হতে চায় তাহলে অনেক সঙ্কট সৃষ্টি হবে। আমার মনে হয় মালয়েশিয়ার সেটি দরকারও নেই। মালয়েশিয়ার দরকার অল্প সংখ্যক লোক এই পদে আসতে চাইবে আর বাকিরা সবাই চাইবে দেশকে বদলে দিতে। আমিও শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হতে চাই।

নুর বলেছিলেন, আমি অনেকদিন ধরে রাজনীতিতে আছি। আমি ও আমার মা মন্ত্রীসভায় থাকতে রাজনীতিতে আসিনি। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে রাজনীতিতে এসেছি। আমরা রাজনীতিতে সংস্কার চাই। আমি তরুণদের পক্ষ হয়ে সেই কাজটিই করবো। কিভাবে আপনি জীবন যাপন করছেন, আপনার কতটা বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে সেগুলো সুরক্ষিত রাখাই বড় ব্যাপার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের ‘রাজনৈতিক ভুলের’র জন্য ক্ষমা চাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, আমি তার (মাহাথিরের) ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করছি এবং মালয়েশিয়াকে রক্ষায় তার সংশ্লিষ্ট হওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছি। ‘নাজিবই (প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক) হোক মালয়েশিয়ার শেষ একনায়ক। ভবিষ্যত আমাদের।

নির্বাচনে বিজয়ের পর নুরুল ইজাহ আনোয়ার বলেছিলেন,  নির্বাচনের এ ফলের পেছনে, নতুন এই পদক্ষেপের পেছনে আনোয়ার ইব্রাহিম ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আমরা চাই, তার বিরুদ্ধে আনা অন্য রাজনৈতিক অভিযোগগুলোও বাতিল করা হবে। সেই সাথে অন্যায়ভাবে আটক থাকা অন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরও আমরা মুক্তি চাই। তাদের সম্মতি এই কথাই প্রমাণ করে যে, তিনি ছিলেন একজন নির্দোষ ব্যক্তি; কিন্তু তিনি এ অভিযোগে মোট ১১ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন।

আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তগত করার ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি এই জোট টিকে আছে কেবল বিশ্বাসের ওপর। যদিও সাবেক একনায়ককে বিশ্বাস করা সহজ নয়, কিন্তু সংস্কারের বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এখানে সেগুলো নিশ্চিত করার জন্য তো রয়েছিই। কে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, আমি এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই। আমি সব সময়ই বলে এসেছি, আমাদের একজন ভালো প্রধানমন্ত্রী দরকার।

আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রীকে নিয়ে যে মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার রাজা
সিএনএন

দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম। মালেয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সমকামিতার অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠান। ২০১৫ সালে একই অভিযোগে দ্বিতীয়বারের মতো কারাগারে যেতে হয় তাকে। সদ্য কারামুক্ত এই নেতা সম্প্রতি কথা বলেছেন মার্কিন গণমাধ্যম কেবল নিউজ নেটওয়ার্কের (সিএনএন) প্রধান আন্তর্জাতিকবিষয়ক সংবাদদাতা ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরের সাথে। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করেছেন মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম ও তানজিলা ইসলাম

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : আনোয়ার ইব্রাহিম, আপনাকে আমাদের অনুষ্ঠানে স্বাগতম। অবশেষে আপনি মুক্তি পেয়েছেন।
আনোয়ার ইব্রাহিম : আপনাকেও ধন্যবাদ ক্রিশ্চিয়ান। আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : আপনার কেমন লাগছে। দীর্ঘদিন খারাপ সময় পার করার পর… এটা আপনার দ্বিতীয়বারের মতো মুক্তি। আপনি মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। এবার মুক্তি পেয়ে আসলে আপনার কেমন লাগছে?
আনোয়ার ইব্রাহিম : অসাধারণ। মহামান্য রাজার আমন্ত্রণে একেবারে কারাগার থেকে রাজপ্রাসাদে গিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন যে, এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ ছিল। তাই তিনি আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং এটি ছিল লজ্জাজনক এক হাস্যকর বিচার। মহামান্য রাজা আমাকে বলেছেন, আপনাকে নিষ্কৃতি দিলাম কারণ আমি বিশ্বাস করি আপনি একেবারেই নিরপরাধ এই ষড়যন্ত্রের অবসান হবেই।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : অসাধারণ একটি ঘটনা যে, মহামান্য রাজা আপনার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন যা অন্য কেউই পারত না। তবে এটিও মনে রাখার মতো ব্যাপার যে, এবার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে এসে আপনার গুরু মাহাথির মোহাম্মদ আবারো নির্বাচিত হয়েছেন এবং যিনি আপনাকে মুক্ত করার জন্য কাজ করেছেন অথচ আমরা এখনো ভুলে যাইনি যে তিনিই আপনাকে প্রথম জেলে পাঠিয়েছিলেন। আসলে কি হচ্ছে?

আনোয়ার ইব্রাহিম : আপনি ঠিকই বলেছেন। তিনি আদালতে এসে আমার সাথে দেখা করেছেন এবং বলেছেন চলো এগিয়ে যাই। দেশে এখন অনেক সমস্যা। নাজিব খুবই দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠেছে এবং দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। আমরা কি এক সাথে কাজ করতে পারি? তার এ কথায় আমি খুবই আশাবাদী হয়ে উঠলাম, তার সাথে আন্তরিকভাবে কথা বললাম এবং আমার সাথে দেখা করতে আসার জন্য ধন্যবাদ দিলাম। আমি তাকে বললাম যে, ব্যাপারটি নিয়ে ভেবে আপনাকে জানাব। তারপর আমার বন্ধুদের তার সাথে আলোচনা করার জন্য পাঠালাম। আমি বলেছিলাম যে, আমি শুধুমাত্র সংস্কারবিষয়ক ব্যাপারগুলোতেই কাজ করতে রাজি আছি। যদি তিনি লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিয়ে এক সাথে কাজ করতে রাজি আছেন, তবে আমিও রাজি।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : আপনি বলেছেন যে, আপনি পুরো ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চান, রাজনীতিকে বিচার ব্যবস্থার বাইরে রাখতে চান। আপনি বলেছেন যে, আপনি বিচার ব্যবস্থাকে রাজনীতিকরণের ভুক্তভোগী ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এখন আমি আপনাকে একটু পড়ে শোনাতে চাই, যে দিন আপনাকে বহিষ্কার করা হলো সেই ৯০ এর দশকের শেষের দিকে মাহাথির মোহাম্মদ কি বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, আমি এমন একজনকে দেশের নেতা হিসেবে কিছুতেই গ্রহণ করব না যিনি সত্যিকারের ভালো মানুষ নন। এখন আপনি বলেছেন, তাকে ক্ষমা করেছেন। আপনি কি সত্যিই তাকে ক্ষমা করতে পেরেছেন? তিনি আপনার সাথে যা যা করেছে, এত কিছুর পরও আপনি কিভাবে তাকে ক্ষমা করতে পারলেন এবং বিশ্বাস করছেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম : মাহাথির আসলে বারবার বলেছেন, তাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল, তিনি নিজে তা করেননি। অন্য কেউ এগুলো কার্যকর করেছে। তিনি একটি ভুল করেছিলেন। আনোয়ার ইব্রাহিমকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে চাননি। এটি ছিল তার নিজের জন্য অনেক বড় ভুল। আমার মনে হয়, পুরনো এসব ভুল বোঝাবুঝি বাদ দিয়ে এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। মালয়েশিয়ার জন্যই কিছু বিষয় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, এর মধ্যে একটি হলো সংস্কার কার্যক্রম। নির্বাচিত দলগুলোর মধ্যে যারা সংস্কারবাদী তাদেরকে নিয়ে কোয়ালিশন গঠন করা হলে আমি খুবই আশাবাদী হবো। আমি আগেও বলেছি, আমি মন্ত্রিসভার সদস্য হতে চাই না। আমি একনিষ্টভাবে সোচ্চার থেকে গণতন্ত্রের জন্য, সংস্কারের জন্য এমনকি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য কাজ করে যাবো।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : আপনি বলেছেন, সামনে এগিয়ে যেতে চান। তারও (মাহাথির) সামনে এগিয়ে যাওয়া দরকার। আপনি আরো ২০ বছর আগেই তাকে এ কথা বলেছিলেন। যখন তিনি আপনাকে বহিষ্কার করেন, সেটা ছিল ব্যাপক আকারে রাজনৈতিকভাবে একঘরে করা, যদিও আপনি আমার কথায় হাসছেন… সে সময় ব্যাপক রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছিল… আপনি তাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন ‘সে উন্মাদ, এটা তার বার্ধক্যসূলভ আচরণ এবং সে নেতৃত্ব দেয়ার অযোগ্য’। এটা আপনি তাকে বলেছিলেন আরো ২০ বছর আগে। এখন তার বয়স ৯২। আপনি কি এখন আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন? আপনি কি মনে করেন আপনার এ বক্তব্য সঠিক নয়?

আনোয়ার ইব্রাহিম : ঠিক আছে, আমি আগেই বলেছি, এসব কথা ছিল আমার বিরুদ্ধে সে সময়ে করা বানোয়াট অভিযোগের বিরুদ্ধে জবাব। এটা ছিল আমাকে ইসরাইলি দালাল, মার্কিন দালাল বা সিআইএ’র এজেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি উল্লেখ করে গণমাধ্যমে চালানো ধারাবাহিক অপপ্রচারের জবাব। এটা ছিল আমার কাছে পাহাড়সমান এক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আপনি জানেন, গেল বছরও তিনি সরকারের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনমনীয় ছিলেন। তিনি এখন বুঝতে পারছেন যে, সরকারের বাইরে থাকলে কিংবা বিরোধী দলে থাকলে গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কিভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : তিনি যখন প্রথম ক্ষমতায় আসলেন, মানুষ সে সময়ের কথা মনে রেখেছে। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন মালয়েশিয়া ছিল এশিয়ার উদীয়মান শক্তি বা এশিয়ান টাইগার। সে সময় এই অঞ্চলে মালয়েশিয়া সত্যিকারের শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠেছিল। দুর্নীতির নানা অভিযোগে মালয়েশিয়া সেই অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও নিচে নেমে গেছে। আমি অবাক হয়েছি যে, মাহাথির যদি টিকে যান, তার রাজনৈতিক জীবনের কিছু বিতর্কিত চিন্তা, কথাবার্তা ছিল। যেমন এখানে একটি অডিও রেকর্ড আপনাকে শোনাতে পারি এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন, আপনি জানেন যে, ইহুদিদের নিয়ে তার একটি দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। ২০০৩ সালের একটি বক্তব্যে তিনি বলছেন ‘বর্তমানে ইহুদিরা প্রক্সির মাধ্যমে বিশ্ব শাসন করছে। তারা কৌশলে অন্যদের মধ্যে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করে এবং এ জন্য তারা মরতেও প্রস্তুত’ এই হলো, সারা বিশ্বের ইহুদিদের সম্পর্কে তার বিশ্বাস। এটা হলো সেই গতানুগতিক ও সমালোচিত ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’। তার মানে তিনি একটি বড় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। এখনো কি তার এই মনোভাব বজায় আছে?

আনোয়ার ইব্রাহিম: আসলে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক বন্ধু-বান্ধব থেকেই তিনি অনেক দূরে আছেন। কারণ নানা ঘটনায় তিনি তাদের অনেকের উপর রেগেও ছিলেন। কাজেই আমার মনে হয় না যে, তার এই নিন্দা বা প্রতিবাদ করা সেমিটিকদের প্রতি বিদ্বেষ। আমি শুধু বলতে পারি, আমার স্ত্রী আজিজাহ, যিনি এখন দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং জোটের কার্যক্রমের তার সহকর্মী, মাহাথির সম্পর্কে তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি এখন সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি পুরোপুরি মনোযোগী। তিনি একটি নজির স্থাপন করেছেন এবং বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন হতে হবে, বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে হবে এবং গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে এটা আরো পরিষ্কার হয়েছে, বর্তমানে গণমাধ্যম ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। কাজেই আমি বিশ্বাস করি না যে, তার আগের বক্তব্য যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মনের ক্ষোভ কাউকে বলাও যায় না।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : আপনি বলেছেন, আপনার স্ত্রী আজিজাহ এখন দলের নেত্রী। আপনার মেয়েও নেতৃত্বস্থানীয় রাজনীতিবিদ। কেউ কেউ বলছেন, কিছু মানবাধিকার সংগঠন বলছে যে, হয় আপনি মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন কিংবা যদি মাহাথির আগামী দুই বছরের মধ্যে আপনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তবে তারা কি শীর্ষ রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করবে অথবা আপনার সাথে কোনো দ্বন্দ্ব হতে পারে?
আনোয়ার ইব্রাহিম : প্রথম কথা হলো, আমি মুক্ত থাকতে চাই, দলে কাজ করতে চাই এবং নেতৃত্ব দিতে চাই। আমার মেয়ে এখন দলে দ্বিতীয় শীর্ষ নেত্রী, সেও মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ আজিজাহ এরই মধ্যে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেছে। এমনকি আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সে নিজেও পদত্যাগ করতে পারে। [যখন আনোয়ার প্রধানমন্ত্রী হবেন] কাজেই আমি মনে করি না যে, এটা কোনো ইস্যু হতে পারে। আজিজাহকে পুরোটা সময়, বিশেষ করে আমার কারাবাসের প্রায় সাড়ে ১০ বছরই সংগ্রাম করতে হয়েছে। কাজেই সে এমনিতেই পদের যোগ্য। আমার মেয়ে, নূরুল ইজ্জাহ, তাকেও যোগ্য মর্যাদা দেয়া হয়নি। সেও কিশোরী বয়স থেকেই গণতন্ত্রের জন্য এবং তার বাবার মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, আমার মনে হয় সেটা আমরা অর্জনও করেছি।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : আনোয়ার ইব্রাহিম, পুরোটা সময় ধরে আপনি আপনার স্ত্রী আজিজাহ’র কথা বলছিলেন। সত্যি কি তিনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন? নারীবান্ধব সভ্যতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার ঊষালগ্নে কেন তিনি এ নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না?

আনোয়ার ইব্রাহিম : জোটের নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য হওয়ার সময়ই তিনি এটা জানতেন। আপনি জানেন, মহামান্য রাজা যা বলেছেন তা সত্যিই মনে রাখার মতো। মহামান্য রাজা পাঁচ-পাঁচবার আমাকে এ কথা বলেছেন, আনোয়ার, আপনি সত্যিই অসাধারণ একজন স্ত্রী পেয়েছেন এবং এই বিষয়টি কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আপনাকে মুক্ত করার জন্য সে কঠোর সংগ্রাম করেছে। এবং যখন আমি তাকে প্রস্তাব দিলাম… মহামান্য রাজা আসলে তাকে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছেন। কারণ সে দলের প্রধান। এবং সব দলের নেতারা আমাদের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কাজেই তাকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রথম দেয়া হয়। কিন্তু সে এ কথা বলে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যে, আমাদের মধ্যকার বোঝাপড়া অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মাহাথিরই হবেন প্রথম ব্যক্তি। এরপর যখন মহামান্য রাজা তাকে প্রশ্ন করেন যে, আপনি কি চান? সে বলেছে আমার শুধু একটাই চাওয়া, আমার স্বামীর মুক্তি। এটা কি আপনার কাছে অসাধারণ মনে হচ্ছে না ক্রিশ্চিয়ান?

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : হ্যাঁ, এটা অসাধারণ, এটা সত্যিই অসাধারণ। আপনি কারাগারে থাকাকালীন কি করতে পছন্দ করতেন?

আনোয়ার ইব্রাহিম : ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। কোনো গণ্যমাধ্যম নেই, কোনো টিভি, রেডিও, পত্রিকা কিছু নেই। আমার শুধু বই পড়ার অনুমতি ছিল। কাজেই আমি হাতের কাছে যা কিছু পেয়েছি, পড়েছি। চীনা দর্শন, মার্কিন ইতিহাস, ইসলাম, হিন্দু ধর্ম, উপন্যাস, চিরায়ত সাহিত্য যেমন শেক্সপিয়ার কিছু পেয়েছি পড়েছি। সেখানে খুবই ব্যস্ত ছিলাম।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর : আপনি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে এসে মুক্তি পেয়েছেন, নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। বিশ্বে ট্রাম্পের এই প্রভাবকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? বিশেষ করে আপনার দেশের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কেমন পড়বে?

আনোয়ার ইব্রাহিম : নব্বইয়ের দশকের পররাষ্ট্র নীতি আমাকে খুব একটা আকর্ষণ করতে পারেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও পরিবর্তনের জন্য এর প্রভাব খুব কমই। কিন্তু আমি মনে করি বর্তমানে এ দেশের নীতিগত অবস্থান, বিশেষ করে মালয়েশিয়া যেসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে তা খুবই লজ্জাজনক। এসব ঘটনা একই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, বহু বছর ধরে বহু মূল্য পরিশোধের পর অবশেষে আরব বসন্তের পরবর্তীকালে ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের পথে এগুলো অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করবে। এবং তার পরই আমরা যেকোনো ধরনের বাড়াবাড়ি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং মালয়েশিয়ায় বহু সংস্কৃতির সমন্বয়ে একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ম্যান্ডেড পাই। আমার মনে হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে, এগুলো আমাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত।

ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর: আনোয়ার ইব্রাহিম, আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আনোয়ার ইব্রাহিম : আপনাকেও ধন্যবাদ ক্রিশ্চিয়ান।

Leave a Reply