আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান ডিআইজির
আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান ডিআইজির
ফেসবুক পোস্টের জেরে রংপুরের পাগলাপীরের ঠাকুরটারীতে মুসল্লি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিতে হতাহত এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে থাকা ঘটনাস্থলের আশপাশের সাধারণ মুসলমানদের বাড়িঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম পিপিএম। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত দেড়শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার সকালে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম পিপিএম পাগলাপীরের শলেয়াশাহর ঘটনার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ডিআইজি বলেন, যারা নিরপরাধ। আমরা তাদের গ্রেফতার করব না। তারা বাড়িঘরে থাকতে পারে। যারা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত, আমরা শুধু তাদের গ্রেফতার করছি। আমরা সব ধর্মের লোক নিয়ে মিটিং করছি। এটা অব্যাহত থাকবে। যাতে কারো মধ্যে কোনো আতঙ্ক না থাকে। কোনোভাবেই যেন পুলিশের হাতে কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানি না হয়। সে ব্যাপারে আমার তরফ থেকে নির্দেশ দেয়া আছে।
ডিআইজি বলেন, হিন্দুরা যাতে আতঙ্কে না থাকে সেজন্য সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। যে ক’টা বাড়ি পোড়ানো হয়েছিল জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাদের ঘর উঠিয়ে দিয়েছি। আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অর্থ সহযোগিতা দিয়েছি রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে। কোনো কুচক্রীমহল আর সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স আমাদের আছে সেখানে।
ঠাকুরটারীর হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা দুলাল চন্দ্র জানান, পুলিশ রাত জেগে আমাদের পাহারা দিচ্ছে। আমরা কখনই এই এলাকায় এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়িনি। আমরা হিন্দু-মুসলমান কাঁধে কাঁধ রেখে চলাফেরা করতাম। কিন্তু টিটু রায়ের জন্য এসব হয়ে গেল।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার সুনীল সরকার জানান, আমরা জনপ্রতিনিধিরা রাতদিন পরিশ্রম করে ঘুম হারাম করে প্রশাসনের সহযোগিতায় এখানে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি। এখানে আর কোনো আতঙ্ক নেই। বাড়িঘর উঠে গেছে। এখন তাদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, অনেক মুসলমান বাড়িঘরে নেই। তারা যেন আবারো বাড়িঘরে ফিসে আসেন। আমরা সবাই মিলে আবারো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারব।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা আওয়ামী লীগের রংপুর জেলা সভাপতি নাছিমা জামান বলেন, ঘটনাস্থলে আর কোনো আতঙ্ক নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত। পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতায় এখানে দ্রুতগতিতে শান্তি ফিরে এসেছে।
টিটু গ্রেফতার হওয়া মাত্রই ফরেনসিক রিপোর্ট
ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, টিটু রায়কে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই আমরা জানতে পারব ওই আইডিটি ফেক আইডি কি না। অথবা তাকে ব্যবহার করে অথবা তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে কোনো কুচক্রীমহল এটা করছে কি না। তিনি বলেন, আমরা টিটু রায়কে গ্রেফতার করে তার ও ফেসবুক ফরেনসিক টেস্ট করে দেখতে চাচ্ছি ঘটনাটি সে ঘটিয়েছে কি না। এ দিকে যারা নিরীহ হিন্দুদের বাড়িঘরে আক্রমণ করেছে, যাদের ইন্ধনে এটা হয়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এখানে যারাই দোষী। যে পক্ষেরই হোক না কেন তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
ঘটনার সার্বিক বিষয় বর্ণনা করে ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। ফেসবুকে আমাদের জানানোর পরে পুলিশ মামলা নিয়ে তদন্ত করছিল। স্থানীয় লোকজন এবং আলেমসমাজ সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের আমাদের পক্ষ থেকে বলাও হয়েছিল যে, আমরা টিটু রায়কে গ্রেফতার করব এবং তদন্ত করে বের করব ফেসবুকের আইডিটা তার কি না। সে তা পোস্ট করেছে কি না।
টিটু নারায়গঞ্জ থাকে। আমাদের টিম নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিল তাকে গ্রেফতার করতে। কিন্তু এলাকাবাসী গত শুক্রবারের জুমার নামাজের পরে একটা মানববন্ধনের ডাক দেন। সেই মানববন্ধনের সময় অন্য একটি কুচক্রীমহল, যারা মানববন্ধনে অংশ নেয়নি। তারা তারাগঞ্জ থেকে একটি নামাজে জানাজা শেষে আসার পথে এবং মমিনপুর ইউনিয়ন থেকে অপর একটি গ্রুপ ক্ষেতের আইল দিয়ে গিয়ে হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ করে। তারা কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং ভফুচুর ও লুটপাট করে। পুলিশ সেখানে আগে থেকেই তাদের নিরাপত্তার জন্য ছিল। তারা কড়া ব্যবস্থা নেয় এবং শর্টগানের গুলি ছোড়ে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ সময় পুলিশ এবং জনগণের সংঘর্ষে একজন শিবিরকর্মী নিহত হয়। আমরা এ সংক্রান্তে মামলা রেকর্ড করেছি। এবং মামলায় এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছি। আমাদের কাছে যাদের ছবি আছে, ভিডিও ফুটেজ আছে। তার ভিত্তিতেই আমরা গ্রেফতার করছি।
এ দিকে সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পাঁচ হাজার করে টাকা বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে নিরীহ হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এটি ন্যক্কারজনক ও ঘৃণিত কাজ। হামলাকারীরা যেই হোক বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় ও যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম মিঠুসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ঠাকুরপাড়া পরিদর্শন করেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। পরে দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে শান্তি সমাবেশ করেন।