আজ সেই ১২ নভেম্বর
আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতিসহ উপকূলবাসীর জন্য এক শোকাবহ দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়েছিল উপকূলের প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। ৪৩ বছর আগের এই দিনে গৃহহারা হয় কয়েক লাখ মানুষ। জলোচ্ছাসে পানিতে ভেসে যায় লাখ লাখ গবাদি পশু ও মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত প্রাণহানির ঘটনা এ দেশে এর আগে কখনো ঘটেনি। সেই দিনের ভয়াবহতার কথা মনে পড়লে আজও চমকে ওঠেন প্রবীণরা। স্বজন হারানো মানুষ হয়ে ওঠেন স্মৃতিকাতর।
সেদিন রেডিওতে ৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের ঘোষণা দেয়া হলেও উপকূলীয় অঞ্চলে রেডিও না থাকায় সাধারণ মানুষ জানতে পারেননি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগাম বার্তা। গভীর রাতে ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার (১৩৮ মাইল) বেগে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে পাহাড় সমান পানির স্রোতে পুরো উপকূলীয় জনপদ ভেসে যায়। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, কক্সবাজার ও পিরোজপুর জেলাসহ গোটা উপকূলীয় এলাকা। এই দিনে উপকূলবাসী হারানো স্বজনদের জন্য দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও কুরআনখানিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
১২ নভেম্বরকে ‘দুর্যোগ দিবস’ ঘোষণার দাবি করে প্রতি বছর বেসরকারি সংস্থা ডরপ আন্দোলন করে আসছে। এবারও ডরপ ও গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার রামগতি কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা সভা ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণের আয়োজন করেছে।
ঢাকাস্থ ভোলা সমিতি: দিবসটি স্মরণে ঢাকাস্থ ভোলা জেলা সমিতির উদ্যোগে সংগঠনের কার্যালয়ে সোমবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভা সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল হক মুকুল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন, ফারুক, হামিদ আহমেদ চৌধুরী তুহিন এবং সভাপতি মামুন অর রশিদসহ নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। বক্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নভেম্বরের কোনো ছবি, অডিও কিংবা ভিডিও সরকারের সংগ্রহশালায় নেই। এভাবে ১২ নভেম্বর জাতির ইতিহাস থেকে মুছে যাবে ভাবতেও অবাক লাগে। তারা একই সঙ্গে দ্বীপজেলা ভোলার নদীভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোলা জেলার সিংহভাগ ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনই যদি ভাঙ্গনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে অচিরেই দেশের মানচিত্র থেকে শষ্যসমৃদ্ধ জেলাটি হারিয়ে যাবে। –