আজ মহান মে দিবস

01/05/2014 8:21 amViews: 12

ঢাকা: আজ  মহান মে দিবস।  দিনটি মাঠে-ঘাটে, কলকারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা।

এদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে শিকাগো শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। এক লাখ পঁচাশি হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও অসংখ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝাণ্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান।

হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘মে দিবস’ হিসাবে পালন করতে শুরু করে।

মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়া আলাদা বাণী দিয়েছেন।

মে দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে।

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি: প্রতি বছরের মতো এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৭ টায়  মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য র্যা লির আয়োজন করা হয়েছে। র্যা লিটি দৈনিক বাংলা থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হবে।

মে দিবস উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় মেলার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যান্য কর্মসূচি: মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যাতলি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহান মে দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

ইরামত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) মহান মে দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টায় মতিঝিল বিমান ভবনের সামনে শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সবা ও বর্ণাঢ্য র্যাালীর আয়োজন করেছে। সমাবেশে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন।

বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোট খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে সকাল ৯ টায় গণজমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিল করবে।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) সকাল ৮টায় জাতীয় প্রেসক্লাব সামনে এক শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করেছে। শ্রমিক সমাবেশ শেষে মে-দিবসের র্যাললি বের করবে সংগঠনটি।

মে দিবস উপলক্ষে আগামীকাল সকাল ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে মিছিল বের হবে।

রাষ্ট্রপতির বাণী: মে দিবস উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সুস্থ কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিল্পোন্নয়নে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহান মে দিবস আজ কেবল অধিকার আদায়ের দিন নয়, বরং সম্মিলিত মেহনতি মানুষের দেশগড়ার অঙ্গীকারও বটে।

‘মহান মে দিবসে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিসহ তাদের সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি ও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাক, এটাই আমার প্রত্যাশা।’ বলেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী: মে দিবস উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প ২০২১ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করেছি। পোশাক শিল্পসহ সকল খাতের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করেছি। জাতীয় শিশু শ্রমনীতি-২০১০ এবং জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে’।

মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের শিল্পখাতের উন্নয়নে সরকারের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে আমরা ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করেছি। এর জনবল তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

Leave a Reply