আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য দায়ী সরকার: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

23/05/2024 10:50 amViews: 4

whatsapp sharing button

বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জন্য সম্পূর্ণভাবে সরকার দায়ী।

সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেখুন, কতো বড় লজ্জার কথা। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজের বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যেটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। এজন্য দায়ী কে? দায়ী সম্পূর্ণভাবে সরকার। তারা সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করার কারণেই আজকে এই ঘটনাটা ঘটেছে। আজকে বাইরে মিডিয়াগুলো থেকে অনেকবার আজিজের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকার সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু তাই নয়, এখনো তারা যেটা বলছেন, রাজনৈতিক কথাবার্তা।

সেনাবাহিনী হচ্ছে, আমাদের সবচেয়ে ভরসার একটা প্রতিষ্ঠান। সেই সেনাবাহিনীকে যদি সরকারের কারণে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়, সেটা কখনোই এদেশের মানুষ মেনে নিবে না। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র‌্যাবের যে সকল কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসলো, তা থেকে তো তারা (সরকার) কোনো শিক্ষা নিলেন না। তাদের মধ্যে একজন আইজিপিও হলেন। এখনো মনে হয় আছেন। এটার কতোটুকু প্রভাব এদের উপরে পড়ে আমার ধারণা নেই। তারা (সরকার) তাদের ক্ষমতা থাকার লক্ষ্যকে চূড়ান্ত করার জন্য এই বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে।

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে কোথাও প্রতিক্রিয়া দেখছি না এবং কেউ লক্ষ্যও করছে না নির্বাচন হচ্ছে। কোথাও আলোচনা এবং কথাবার্তাও নাই। নির্বাচন ব্যবস্থার উপরেই মানুষের আস্থা চলে গেছে। এই সরকার এটা করেছে। সফলভাবে করেছে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ ভারতে উদ্ধার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক নয়- তাদের (বাংলাদেশ সরকার) তথাকথিত সংসদ সদস্য বিদেশে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন, তার কোনো খবর তারা (বাংলাদেশ সরকার) দিতে পারলেন না। না পারলো বাংলাদেশ সরকার, না পারলো তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। আমরা কী মনে করবো? এটার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা। টাকার পাহাড় তৈরি করা, বিদেশে পাঠানো। এ ধরনের কোনো ঘটনা কিনা তা আমরা জানি না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাম মাওলা রনির গাড়িতে হামলা হয়েছে। কেন? কারণ একটাই, গোলাম মাওলা রনি তার বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যদিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন। অর্থাৎ সমালোচনা করা যাবে না। এ কারণে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমানের শাহাদতকে কখনো আমরা খাটো করে দেখতে পারি না, বা একটা সাধারণ ঘটনা মনে করি না। একটা গভীর চক্রান্তে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে একটা পরনির্ভরশীল নেতৃত্ব সৃষ্টির কারণেই  সেদিন সেই জাতীয়তাবাদী নেতা জিয়াউর রহমানকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে দেয়।

তিনি বলেন, আজকের শাসকগোষ্ঠী জিয়াউর রহমানের নামটা মুছে ফেলতে চায়। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চায়। তাকে খলনায়কে পরিণত করার জন্য তারা সেই কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করে সব জায়গায় তারা সেই একই ধরনের কথা বলছে এবং সস্পূর্ণভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জিয়াউর রহমান নাকি বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন! এটা পুরোপুরিভাবে একটা সত্যের অপলাপ করেছেন। মেজর হাফিজ (বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ) যিনি তার (জিয়াউর রহমান) ওই সময়ের সহকর্মী ছিলেন, তিনি আমাকে বলেছেন- এটা সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা কথা। জিয়াউর রহমান সাহেব কখনোই বাকশালের ফরম পূরণ করেননি। এভাবে মিথ্যা কথা বলে বলে তারা জিয়াউর রহমান সাহেবকে বিভিন্নভাবে পরিচিত করতে চান।

সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (বীরউত্তম) ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল। প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক, সদস্য সচিববৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচিগুলো হলো: জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ২৮শে মে থেকে ১১ই জুন পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে। এরমধ্যে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ ও কালোব্যাজ ধারণ, সংবাদপত্র এবং অনলাইন পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, দিনটি উপলক্ষে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা-পোস্টার প্রকাশ করা হবে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৯শে মে বেলা ৩টায় বিএনপি’র উদ্যোগে রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে আগামী ৩১শে মে বাদ জুমা নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণদোয়ার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকল বিভাগীয় শহরে একটি বিশেষ বিষয়ের ওপর আলোচনা অথবা সেমিনারের আয়োজন করা হবে।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন আগামী ৩০শে মে ভোর ৬টায় দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবেন এবং জিয়ারত শেষে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে কবরস্থান প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া সকাল থেকে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে ড্যাবের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রতি থানায় দুস্থদের মাঝে কাপড় ও রান্না করা খাবার বিতরণ এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। অনুরূপভাবে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে জেলা ও মহানগরসহ সকল ইউনিট এবং ইউনিটসমূহের অধীনস্থ সকল ইউনিট কার্যালয়ে ৩০শে মে ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং নিজ নিজ এলাকার সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে কাপড়, রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হবে।

Leave a Reply