আগুন থেকে রক্ষা করবে নাদিমের রোবট
বড়দের পাশাপাশি ক্ষুদে বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন রোবট তৈরিতে। এরই ধারাবাহিকতায় স্ট্যান্ডার্ড রোবট তৈরি করে সফলতা দেখিয়েছেন খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামের ক্ষুদে বিজ্ঞানী মো. নাদিম মীর।
তিনি সাতক্ষীরা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং-এর পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র। তার বাবা জাহাঙ্গীর মীর খুলনা বন বিভাগে কর্মরত।
শনিবার সকালে নাদিমের সাথে কথা হলে তিনি রোবটটির বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানান, রোবটটি রিমোট কন্ট্রোল ও স্বয়ংক্রিয় উভয়ভাবেই চালানো যাবে। এটি যে স্থানে থাকবে তার আশপাশে যদি কোনো আগুন জ্বলতে শুরু করে তাহলে রোবটটি একটি বার্তা রিমোটে পাঠিয়ে দেবে।
রুমের ভেতর যদি কোনো মানুষের উপস্থিতি বা নড়াচড়া থাকে এতে রোবটটি একটি বার্তা রিমোটে পাঠিয়ে দেবে। রোবটটি রং দেখে দেখে পথ চলতে পারবে। যদি রঙের গতিপথ বাঁকা থাকে তবে রোবটটিও সেই বাঁকা পথ অনুসরণ করবে। রোবট চলাকালে যদি রোবটের সামনে কোনো বস্তু থাকে সেক্ষেত্রে রোবটটি থেমে যাবে। যতক্ষণ না বাধা সরে যাবে ততক্ষণ রোবটি সামনের দিকে যাবে না।
সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তির শীর্ষে যে ব্যাপারটি তা হলো এই রিমোট কন্ট্রোল কাজ করবে হাতের স্পর্শে। যা কন্ট্রোলিং এর ক্ষেত্রে ভাল কাজ করবে।
নাদিম জানান, রোবটটি ২০ সে. মি. লম্বা এবং এর প্রস্থ ৪ সে. মি.। এটি তৈরি করতে আলট্রাসোনো, ডায়োড, ট্রানজিস্টর, আই.সি, আই. আর ও পি.আর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে।
রোবটটির ব্যবহারের ক্ষেত্র সম্পর্কে নাদিম বলেন, “এটি তৈরির প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য হলো গোয়েন্দা সংস্থা বা প্রশাসনের মিশনে সাহায্য করা। যেমন- কোনো রুমে বা দূরের অলিগলিতে ঢোকার পূর্বে যদি রোবটিকে চালনা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে স্থানে মানুষের উপস্থিতি আছে কি না তা রোবটির সিগন্যালে বোঝা যাবে।
রোবটটি যে কোনো মিল, ইন্ডাস্ট্রিজে মালামাল বহনের কাজ করতে পারবে এবং সেই মুহূর্তে যদি রোবটের আশপাশে আগুনের উপস্থিতি পাওয়া যায় তবে রোবটটি থেকে একটি সিগন্যাল পাওয়া যাবে। যা বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা করবে।
রোবটটি তৈরিতে কত দিন সময় লেগেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার প্রোজেক্ট সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছে ৮ মাস। আর এ কাজের তত্ত্বাবধান করেছেন সাতক্ষীরা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং-এর শিক্ষিকা প্রকৌশলী মোবাশ্বিরা সুলতানা মুনিরা।”
তিনি জানান, তার এই প্রোজেক্টটি তাদের ইনস্টিটিউট এর স্কিল কম্পিটিশন থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
প্রোজেক্টটির তত্ত্বাবধায়ক সাতক্ষীরা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং এর শিক্ষিকা প্রকৌশলী মোবাশ্বিরা সুলতানা মুনিরা বলেন, “স্ট্যান্ডার্ড রোবটটি তৈরি করতে নাদিমের ৮ মাস সময় লেগেছে। এটি দিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা বা প্রশাসন এর মিশনে সাহায্য করা যাবে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিজে মালামাল বহনের কাজ করতে পারবে এ রোবটটি।”
তিনি আরো বলেন, “রোবটটি আগুনের উপস্থিতি পেলে একটি সিগন্যাল দেবে। যা বড় ধরনের কোন অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা করবে। সহযোগিতা পেলে রোবটটি আরো আধুনিকায়ন করা সম্ভব।”
প্রকৌশলী মুনিরা জানান, নাদিমের মতো আমাদের মেধার কোনো কমতি নেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে হাজার হাজার উৎসাহী মেধাবী প্রযুক্তিপ্রেমী ব্যক্তি হারিয়ে যাচ্ছেন। সরকার ও বিত্তবানদের এ ধরনের কাজে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।