আগামী পাঁচ বছর দেশসেবার সুযোগ পেলেপ্রতিঘরে বিদ্যুত যাবে, দেশে কোন কুঁড়েঘর থাকবে না : শেখ হাসিনা

19/10/2013 7:25 pmViews: 10

Sk.-Hasina-PMবিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনেও জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে দেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে, সেই বিশ্বাস আমরা রক্ষা করেছি। দেশ আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশকে পিছিয়ে দিয়ে গেছে। দেশের এ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে জনগণের ভোট নিয়ে আবার আমাদের ক্ষমতায় আসতে হবে। আগামীতে আরও কাজ করতে হবে। যে কাজগুলো শুরু হয়েছে, সেগুলো শেষ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে নতুন কাজও শুরু করতে হবে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, ইনশাআল্লাহ আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে দেশের সেবা করতে পারব।
আগামীতে ক্ষমতায় এলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন এবং প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা চলছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় এসে শুধু নিজেদের ধন-সম্পদ বানানো এবং লুণ্ঠিত অর্থ বিদেশে পাচার করতেই ব্যস্ত থাকে, তাদের দিয়ে দেশের উন্নতি হবে কিভাবে? যারা দেশের জন্য ও স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করে, তারা ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই যে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়, দেশ সাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠে, তা আমরা প্রমাণ করেছি।
শনিবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগসমর্থিত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জনপ্রতিনিধিদের ত্যাগ ও সেবার মনোভাব নিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোগে নয়, ত্যাগেই আনন্দ। মহান কাজের জন্য মহান ত্যাগ প্রয়োজন। আমরা কে কী হলাম সেটি বড় কথা নয়। সেবা করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে দেশের একজন মানুষও দরিদ্র থাকবে না। কাউকে কুঁড়েঘরে থাকতে হবে না। কী পেলাম আর কী পেলাম না, তা ভাবলে চলবে না। যারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, তাদের জন্য আমরা কী করতে পেরেছি, সেই মানসিকতা নিয়েই কাজ করতে হবে। তাদের উন্নয়ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে ত্যাগের মহিমা নিয়ে জনগণের সেবা করতে হবে। কারণ দেশের উন্নতি হলে সবার উন্নতি হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র বেগম সেলিনা হায়াত আইভীসহ সারাদেশের আওয়ামী লীগসমর্থিত ৩৮৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬৮০ ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৭৯ জন পৌরসভার মেয়র যোগ দেন। সূচনা বক্তব্যের পর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা নিজ এলাকার কিছু মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে নানা ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করলেও দেশের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে সব মান-অভিমান, দ্বন্দ্ব-বিবাদ ভুলে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ়অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময়সভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, অসীম কুমার উকিল, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। মতবিনিময়সভায় বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আগামীতে ক্ষমতায় এলে তাঁর পরিকল্পনার কথা সারাদেশ থেকে আগত জনপ্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরে বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় এলে ব্যাপকভিত্তিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সরকার শুধু দেশের উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন ও সবকিছু মনিটরিং করবে। আর তা বাস্তবায়ন করা হবে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। কোন জেলায় এবং জেলাধীন সব উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রাম পর্যন্ত কী কী সমস্যা আছে, কী কী উন্নয়ন আগে করতে হবে, তা জেনে নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এমনভাবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে, যাতে প্রতিটি এলাকার মানুষ তার সুফলভোগ করতে পারে।
বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নই আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা দেশের প্রতিটি জায়গায় উন্নয়ন করেছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে বিদ্যুত ও গ্যাসের জন্য হাহাকার ছিল। ক্ষমতায় থেকে তারা শুধু দেশের জনগণকে খাম্বা দিয়েছে, বিদ্যুত দেয়নি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এখন ৯ হাজারেরও বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেব ইনশাআল্লাহ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আজ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতোই উন্নত ও সমৃদ্ধ হতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মিছিল থেকে দেশকে পিছিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে স্বাধীনতার ৪২ বছরে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে চলে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসররা ক্ষমতায় থেকে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। পরাজিত শক্তিরা ক্ষমতায় থাকলে সে দেশ কোন দিনই উন্নতি করতে পারে না, তা বিগত দিনে প্রমাণ হয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায় নিশ্চিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন দল ও শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত নিয়েই আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। তার পরও যাঁরা বলেন, তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, হয় তাঁরা জেনে বলেন না অথবা বলতে চান না।
আগামী নির্বাচনেও জনগণের সমর্থন কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারী অথবা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন আমরা দিচ্ছি। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য নিরসনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply