আখাউড়া দিয়ে ট্রানজিটে ভারতীয় পণ্যের প্রথম চালান
বাংলাদেশ ও ভারতসহ সার্কের চারটি দেশের মধ্যে পরিক্ষামূলকভাবে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এ ট্রানজিট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ভারতীয় ভোডা ফোনের ইলেক্ট্রনিকস সরঞ্জাম ভর্তি একটি (কাভার্ড ভ্যান) ট্রাকের প্রথম চালান মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্ত পথে ত্রিপুরারাজ্যের আগরতলায় প্রবেশ করে। এ সময় ত্রিপুরা আগরতলা স্থলবন্দরের কাস্টমস্ কর্মকর্তা বাণিক বত্ত চক্রবর্তী াংলাদেশের আখাউড়া স্থলবন্দর কাস্টমস্’র সহকারি কমিশনার (এসি) মিহির কুমার চাকিমার কাছ থেকে ভোডা ফোনের ইলেক্ট্রনিকস সরঞ্জাম সংক্রান্ত কাগজপত্র বুঝে নেন। ট্রাজিট সুবিধার আওতায় পরিক্ষামূলক এই ভারতীয় পণ্য সামগ্রী নিয়ে ট্রাকটি রোববার বিকালে কলকাতা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরে আসে। ট্রাকটি সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় বেনাপোল থেকে আখাউড়া উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।
আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সার্ক জোটের চারটি দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান এবং নেপালের মধ্যে পণ্যবাহী যান চলাচলের জন্য সম্প্রতি সম্পাদিত (বিবিআইএন)’র চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলক যান চলাচল শুরু হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা থেকে ভারতীয় ভোডা ফোনের ইলেক্ট্রনিকস্ সরঞ্জাম ভর্তি (কাভার্ড ভ্যান) ট্রাকের প্রথম একটি চালান বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দরে আসে। কোলকাতা স্থলবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ত্রিপুরারাজ্যের আগরতলা পৌঁছানো এ ট্রাকটি পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক কুড়িয়ার সংস্থা ডি এইচ এল। এতে যে ইলেক্ট্রনিক পণ্য আছে তা যাবে পূর্বোত্তর ভারতের গৌহাটিতে।
পরিক্ষমূলক প্রথম চালানের পণ্যবাহী ট্রাকটি কোলকাতা-বেনাপোল-ঢাকা- ভৈরব হয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্ত পথে ত্রিপুরারাজ্যের আগরতলায় প্রবেশ করে।
পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে থাকা ভারতীয় কাস্টমস্ অফিসার মলাই রঞ্জন পাইন যুগান্তরকে জানান, চার দেশের মধ্যে চুক্তির আওতাতেই এই যান চলাচল শুরু হলো। তিনি বলেন, এটা কোন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নয়- সার্কের আওতায় আঞ্চলিক যোগাযোগের এ উদ্যোগে বাংলাদেশ শামিল হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ভারত জোর সহযোগিতা পাচ্ছেন। সেজন্য তিনি বাংলাদেশে সরকারকে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
ডিএইচএল গ্লোবাল ফরওয়াডিং কোম্পানির সিনিয়র অফিসার মো. ফিরোজ জাহাঙ্গীর যুগান্তরকে বলেন, প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা মূল্যের ভোডা ফোনের ৭ প্যাকেজ ইলেক্ট্রনিকস সরঞ্জাম নিয়ে ভারতীয় ট্রাক (ডব্লিউবি -১১বি-৯৫১৯) আগরতলা হয়ে গৌহাটি যাবে। এর আগে বাটা সু-কোম্পানীর ১১৬ প্যাকেট পণ্য বেনাপোল স্থলবন্দরে আনলোড করা হয়েছে।
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে এ পথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে দূরত্ব কমে ৬৪০ কিলোমিটারে নেমে এলো, যার জন্য আগে পাড়ি দিতে হতো ১’হাজার ৫৫০ কিলোমিটার পথ। তিনি আরো বলেন, শুধু আগরতলা নয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলও এই যান চলাচলের ফলে উপকৃত হবে।
জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় কোলকাতার ক্ষিদিরপুর নৌবন্দর থেকে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর হয়ে সড়ক পথে আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্ত পথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাশুল বিহীন (শুল্কমুক্ত) ভাবে বিভিন্ন পণ্যের একাধিক চালান ত্রিপুরারাজ্যের আগরতলায় নিয়ে গেছে ভারত। ভারত ২০১১ সালে এ পথ ব্যবহার করে ত্রিপুরারাজ্যের পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল পরিবহণে ১২০ চাকার ট্রেইলরে করে ভারী ভারী যন্ত্রাংশ নিয়ে গেছে। ২০১২ সালে গ্যালভানাইজড্ প্লেইন স্টিল সিআই শিটের একাধিক চালান উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিয়েছে ভারত। বর্তমানেও ভারতীয় ২৫ হাজার টন খাদ্যপণ্যের (চাল) একাধিক চালান বিনা শুল্কে ত্রিপুরায় নিচ্ছে ভারত।