আওয়ামী লীগ আজ থেকে রাজপথ দখলে রাখবে

24/10/2013 6:20 pmViews: 11

alig logoবিশেষ প্রতিনিধি ॥ ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে আজ শুক্রবার থেকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত গোটা রাজধানী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। আইনকে অগ্রাহ্য করে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আজ ভোর থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সজাগ ও সতর্কভাবে অবস্থানের মাধ্যমে মসজিদ, অলিগলি, পাড়া-মহল্লাসহ পুরো রাজপথে দখলে রাখবে তারা। বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে নৈরাজ্য করার কোন সুযোগ দেবে না দলটি। রাজধানীতে কেউ অরাজকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটানোর চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে মহানগরীর ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা শাখা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ এ নির্দেশ দেন। রাজধানীতে আজ সমাবেশ করার সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও প্রশাসনের অনুমতি না পেলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ।
বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিরোধী দলের যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাজপথে সক্রিয় থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজপথে যে কোন অরাজকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- রুখে দেয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। এ পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে থাকবে।
তিনি বলেন, মধ্যযুগীয় কায়দায় চর দখলের মতো দা-কুড়াল, বল্লম নিয়ে বিএনপি নেতারা তাঁদের কর্মীদের রাজপথে নামতে বলেছে। এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? তবে বাংলার জনগণ তাদের দা-কুড়াল নিয়ে নৈরাজ্য করার সুযোগ দেবে না। নির্বাচনকালীন আন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাব অসাংবিধানিক উল্লেখ করে হানিফ বলেন, আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের মেয়াদ রয়েছে। সংসদ যতদিন থাকবে সরকার ততদিন থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংসদ বহাল থাকবে।
হানিফ আরও বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। আমাদের এই বিচার শেষ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে আবার প্রয়োজন। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ক্ষমা করার ঘোষণাকে ‘অপমানজনক’ উল্লেখ করে হানিফ বলেন, তাঁর কাছে কে ক্ষমা চাইতে গেছে যে তিনি ক্ষমা করেছেন? বরং খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ যেসব হত্যাকা- ঘটিয়েছেন, সে জন্য তাঁর জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি বলেন, আজ শুক্রবার জামায়াত-শিবিরকর্মীরা গুপ্ত হামলার মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা করতে পারে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। গত দুই দিন ধরে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা সৃষ্টি করেছে। এ কারণে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা ঢাকা ও তার আশপাশের মসজিদগুলোতে অবস্থান নিচ্ছে। যারা (বিএনপি-জামায়াত) দেশকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বানাতে চায় তারা মসজিদগুলোকে অপবিত্র করতে পারে। কিন্তু তাদের সে সুযোগ দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এসব কারণে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে শুক্রবার সকাল থেকেই মসজিদগুলোতে অবস্থান নিতে হবে। যাতে মসজিদ থেকে কেউ উস্কানি দিতে না পারে। তারা নামাজ পড়ার আড়ালে মসজিদে বসে কোরান সুন্নাহবিরোধী অপপ্রচার চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে নানক বলেন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন। অন্যথায় জনবিছিন্ন হয়ে যাবেন এবং দেশে রাজনীতি করতে পারবেন না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, একাত্তরের মতো যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে দুশমনের (বিএনপি-জামায়াত) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের পাড়া-মহল্লায় অপরিচিত সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে তাঁকে পুুলিশের হাতে সোপর্দ করুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা রুখে দিতে হবে।
২৫ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, পল্টন ময়দান, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ, ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান রাজধানীর এই ৩টি জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে প্রশাসনের কাছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রশাসনের অনুমতি পেলে সমাবেশ করব। আর অনুমতি না পেলে প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও সমাবেশ করব না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আইন প্রতিমন্ত্রী ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, দফতর সম্পাদক সহিদুল ইসলাম মিলনসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

Leave a Reply