আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
নিউজ7 বিডিঃ ক্ষমতাসীন দলের ঘোষিত ইশতেহারে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় যমুনা ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু, ফোর-জি চালু, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা-দক্ষতা বাড়িয়ে এর কার্যকারিতা বাড়ানো, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার অব্যাহত রাখা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখারও প্রতিশ্রুতি এসেছে।
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের প্রচারে নামার পর ভোটের আট দিন আগে শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
মহাজোট সরকারের ৫ বছরের সাফল্যও তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। বিরোধী দলের অসহযোগিতা ও সংঘাতের রাজনীতি নিয়ে একটি পরিচ্ছদ রাখা হয়েছে ৪৮ পৃষ্ঠার ইশতেহারে।
আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে গিয়ে আন্দোলনের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, পবিত্র কোরআন শরিফে অগ্নিসংযোগ, শিল্প-কারখানায় অগ্নিসংযোগ, রেলওয়ের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলা, সড়ক কাটাসহ রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদের ধ্বংস, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, উপাসনালয় ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বৃক্ষ নিধনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার করার অঙ্গীকার করেছেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানাসহ অর্থনীতির পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং নাশকতায় ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনা পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতীয় যমুনা সেতু ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কারিগরি ও অন্যান্য প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা ছাড়াও সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হবে।
২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পরিকল্পিত ৩০ লাখ সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার সহজলভ্য ও ব্যাপক করা হবে।
এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, এক হাজার তিনশ’ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করা হবে। ২০৩০ সালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিস্যা হবে প্রায় ৫০ শতাংশ।
দ্বিতীয় মেয়াদে সজনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, অতি দরিদ্র ও দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও টেস্ট রিলিফ ছাড়াও একটি বাড়ি একটি খামার, আশ্রয়ন, গৃহায়ন, আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছ গ্রাম, ঘরে ফেরা প্রভৃতি কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা অব্যাহত থাকবে বলে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণের ক্ষমতায়ন ও অধিকতর অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।
“বর্তমান কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক কাঠামোর গণতান্ত্রিক পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের কাছে অধিকতর ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি স্তর বিন্যাসের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হবে।”
২০১৮ সালের মধ্যে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্যোগ শুরু হবে এবং ২০২১ সালে সবার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হবে।
আগামী পাঁচ বছরে দেশের সব জমির রেকর্ড ডিজিটালাইজড করার কাজ শেষ করা হবে। খাস জমি, জলাশয় এবং নদী ও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা জমি অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভূমিহীন ও বাস্তুভিটাহীন হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করা হবে।
উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং ভর্তি সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও পরিচালন ব্যবস্থাকে অধিকতর গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার পাশাপাশি শিক্ষকদের দলাদলির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশগুলো পুনর্মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।
নবম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০০৮ সালে ১২ ডিসেম্বর ‘দিনবদলের সনদ’ শিরোনামে দলের নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন শেখ হাসিনা, যা সেই সময় ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং ভোটে বিপুল বিজয় পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
ওই ইশতেহারে ‘রূপকল্প ২০২১’ শিরোনামে বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
বিরোধীদলের বর্জনের কারণে ইতোমধ্যে ১৫৪টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ফলে ৫ জানুয়ারি ভোট হবে বাকি ১৪৬টি আসনে।
ইতোমধ্যে ফয়সালা হয়ে যাওয়া ১৫৪ জনের মধ্যে ১২৭টি আসনে আওয়ামী লীগ, ২১ আসনে জাতীয় পার্টি, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২ ও একটি আসনে জেপির প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।