আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাব না : খালেদা জিয়া
প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।’ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস থাকলে সমানে সমানে দাড়ান। নিদর্লীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ জয় পেলে স্বাগত জানাবে বিএনপি।’
রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত পেশাজীবীদের জাতীয় কনভেনশনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখনও সময় আছে, সংবিধান সংশোধন করুন। যত দিন যাচ্ছে আপনারা জনগণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। কাজেই সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।’
পার্লামেন্টে একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
‘নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এদেশে গণতান্ত্রিক সরকারই আসবে। স্বৈরশাসিত সরকার এদেশের জনগণ মানে না’- মন্তব্য করেন বেগম জিয়া।
উপস্থিতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছেন, বক্তব্য রেখেছেন। আশা করি আপনারা তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে সামনের দিনগুলোতেও আমার পাশে থাকবেন। যদি নাও থাকেন আমি একাই তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে লড়ে যাব।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনার নৌকা ফুটো হয়ে গেছে। আপনার এই নৌকায় আর কোনো মাঝি উঠবে না। সারা দেশের মানুষ আজ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। এই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আপনাদের অধীনে সম্ভব নয়। কারণ আপনার কতগুলো কার্যকলাপই বলে দেয় আপনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই নির্বাচন করা মানে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করা। আমরা ভোলা আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাচনের পরে আর কোনো নির্বাচন করিনি। ওই নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে আপনাদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না।
মেয়র নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো জাতীয় কোনো নির্বাচন নয়। এগুলো ছিল নির্দলীয় নির্বাচন। আপনারা মনে করেছিলেন ফাঁকা মাঠে গোল দেবেন। কিন্তু সেই এলাকার জনগণ এক হয়ে আপনাদের পরাজিত করেছে। ৫ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দেখেই আপনাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলেন। আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি সাদেক হোসেন খোকা ছিল। তাকে সরিয়ে একজন অনির্বাচিত প্রতিনিধিকে কেন বসালেন।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তখনও সংবিধান অনুযায়ী কেএম হাসানের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তখন আপনারা কেএম হাসানের অধীনে যদি নির্বাচন না মানেন তাহলে এখনও সময় আছে, আপনাদের সংখ্যাগরিষ্টতা আছে। সংবিধান সংশোধন করুন। যতদিন যাচ্ছে আপনারা জনগণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। কাজেই সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। আর যদি মনে করেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি দিয়ে নির্বাচন করাবেন, সেটা ভুল। সেটা এই দেশে হতে দেওয়া হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমি আবারও বলছি, এই বাংলাদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারই ক্ষমতায় আসবে। কোনো অনির্বাচিত আমলাদের সরকার আসবে না।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনার মুখে গণতন্ত্র মানায় না। কারণ আপনি বারবার স্বৈরশাসককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মইন উদ্দিন ফখরুদ্দিনের শপথের সময় গিয়েছিলেন। তাদের সব কাজের বৈধতা দেওয়ারে কথা বলেছিলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই। ইলিয়াস আলীকে ফেরত চাই। চৌধুরী আলমকে গুম করা হয়েছে। শিবিরের সভাপতি যুবক দেলোয়ারকে কিভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে। একটা যুবক ছেলে সে একটা দল করতে পারে। তাতে কী অপরাধ। তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। তাই যুব সমাজকে বলবো, তোমাদের জাগতে হবে। পাশের হার বেশি দেখানোর জন্য বেশি করে গ্রেস দিয়ে পাশ করিয়ে দেয়। এর উদ্দেশ্য কী? এই দেশের ছেলে-মেয়েদের মুর্খ রেখে অন্য দেশের লোকদের ওপরে বসানোর জন্য।
তিনি বলেন, আপনারা যা বলছেন আর বিলবোর্ডে ছাপাচ্ছেন, এসব অফিস আদালতে ঘেটে দেখেন- লজ্জা পাবেন। এগুলো সব মিথ্যা। উন্নয়ন যা করার আমাদের সময় করেছি। আপনারা কোনো উন্নয়ন করেননি। এই সরকারের দেশপ্রেম নেই। এদের দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এরা যুবকদের মাদক খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চায়। আমি যুব সমাজকে বলতে চাই, মাদক খাওয়া চলবে না। আমরা মাদক বন্ধ করবো।
আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে বাচান। আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করুন। তাহলে দেশের উন্নয়ন হবে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া