অভিযোগ অস্বীকার খালেদার

02/12/2016 12:29 pmViews: 7

অভিযোগ অস্বীকার খালেদার

 

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। একই সঙ্গে এ মামলায় আদালতের কাছে সুবিচার প্রার্থনা করে সাফাই সাক্ষী হাজির  করতে চান বলে আদালতকে অবহিত করেন তিনি। ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে গতকাল ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় দেয়া জবানবন্দির শুরুতে তিনি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি দাবি করেন, এসব সাক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে যেসব বক্তব?্য দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরুতে মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্মরণ করে আমার কথা শুরু করছি। এদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছিল আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য। শহীদ জিয়াউর রহমান সেই সব লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষ অকাতরে জীবন দিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার সেই সব লক্ষ্য আজ পদদলিত। সারা জাতি আজ লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত। সমগ্র বাংলাদেশকেই আজ এক বিশাল কারাগার বানানো হয়েছে। সবখানেই চলছে অস্থিরতা ও গভীর অনিরাপত্তাবোধ। খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এই মুহূর্তে কারাগারে বন্দী। বিএনপির প্রায় ৭৫ হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। আমাদের দলের ৪ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজারের মতো মামলা করা হয়েছে। নির্যাতন, হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ভয়ে বহু নেতাকর্মী বাড়ি-ঘরে থাকতে পারেন না। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গুম, খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী। তাদের ঘরে ঘরে আজ কান্নার রোল। খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বড় বেশি বলা হয়। কিন্তু কোথায় আজ সাংবিধানিক শাসন? আমাদের সংবিধান নাগরিকদেরকে যেসব অধিকার দিয়েছে, কোথায় আজ সে-সব অধিকার? কোথায় আজ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার? এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের ওপর শুনানিতে অংশ নিতে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩-এ পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পৌনে ১টা থেকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারকাজের শুরুতেই এ মামলায় ৩২ জন সাক্ষীর দেয়া সাক্ষ্যের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান বিচারক। পরে খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, তিনি লিখিত কোনো বক্তব্য দেবেন না। নিজেই আদালতে বক্তব্য দেবেন। এর প্রত্যুত্তরে আদালত বলেন, খালেদা জিয়া যত ঘণ্টা বক্তব্য দিতে চান, দিতে পারবেন। সব বক্তব্য লিখে নেয়া হবে। এরপর খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য শুরু করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার জবানবন্দি শুরু করে ১৫-২০ মিনিট বক্তব্য দেন। কিছুক্ষণ পরে সেটা পরবর্তী তারিখে অব্যাহত রাখার জন্য সুযোগ ও সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ৮ই ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন। মামলায় অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে সাফাই সাক্ষী দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে আদালতে তাও মঞ্জুর হয়। এদিকে গত ১০ই নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুই সপ্তাহের সময় চান। পরে আদালত ২৪শে নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন। কিন্তু ওই তারিখে তিনি হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় আবেদন করলে আদালত ১লা ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে জিয়া ?অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও হাজিরা দেন খালেদা জিয়া। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে মামলা করে দুদক। এতে ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি চারজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯শে মার্চ অভিযোগ গঠন করা হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দুটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে এ আদালতে। খালেদা জিয়ার আগে অরফানেজ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়। মামলাটির আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট বোরহানউদ্দিন তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা শেষ করেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার ৩১ সাক্ষীরই সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হলো। এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে দলের সিনিয়র নেতা ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত হন। আসামিপক্ষে আবদুুর রেজ্জাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া ও বোরহান উদ্দিন মামলার বিভিন্ন ধাপ পরিচালনা করছেন। আর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে- মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম, কাদের গনি চৌধুরী ও শাম্মী আক্তারসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হন। উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩  হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই  আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। পরের বছর ১৯শে মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়া, তার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচারকাজ একই আদালতে চলছে। ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৯ সালের ৫ই আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

Leave a Reply