অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে আবার অঙ্গীকার
ঢাকা: আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ভারতের সাথে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং সীমান্ত চিহ্নিতকরণ এবং ছিটমহল হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের এক সপ্তাহ আগে দেয়া ইশতেহারে এই অঙ্গীকার করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে দেয়া ইশতেহারেও এই কথাগুলো বলেছিল দলটি। সে অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে চুক্তির দ্বারপ্রান্তেও পৌঁছেছিল সরকার। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধীতায় শেষ মুহূর্তে আটকে যায় চুক্তি। আবার স্থল সীমানা চিহ্নিতকরণে ভারতের লোকসভায় নানা বাধা পেড়িয়ে বিল উঠলেও তা পাস হয়নি। এ ক্ষেত্রেও বাধা হিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসলে এই বাধাগুলো মোকাবেলা করা যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
ইশতেহারে সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এতে বলা হয়, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জলবিদ্যৎ উৎপাদন ও অভিন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। মিয়ানমার থেকে রহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধৈর্যশীল হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম, এশিয়া কো-অপারেশন ডায়ালগ, এশিয়া ইউরোপ মিটিংসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল ফোরামে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে বলেও জানান শেখ হাসিনা। সার্ক, বিমসটেক, ডি-৮ প্রভৃতি ফোরামগুলোকে আরও ফলপ্রসূ করার উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে বাংলাদেশর অধিকার প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে আমাদের যে ন্যায়সঙ্গত অধিকার ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের সাথে মামলার নিষ্পত্তির মাধ্যমে যে এলাকায় আমাদের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে সে সকল এলাকার সম্পদ সংরক্ষণ ও আহরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের ব্যবস্থা করা হবে’।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং এ সকল ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া মুসলিম দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দূরপ্রাচ্য, আসিয়ানভূক্ত দেশসমূহ, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ এবং আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও নিবিড় করার কথা জানায় আওয়ামী লীগ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা, রাশিয়া, চীনসহ উন্নত ও নেতৃত্বস্থানীয় অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকারও করেছে আওয়ামী লীগ। এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে দলটি।
ইশতেহারে আরও উল্লেখ করা হয়, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ আরও অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে এবং তাদের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার গণতন্ত্রায়নের জন্য আমাদের কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।