অধিকার আদায়ে ঐক্যের বিকল্প নেই : ড. নীনা

23/05/2015 8:14 pmViews: 14
অধিকার আদায়ে ঐক্যের বিকল্প নেই : ড. নীনা

হোয়াইট হাউজের উদ্যোগে গত ১২ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে এশিয়ান-আমেরিকান এন্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডারদের (এএপিআই) এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে দিনব্যাপী এ সম্মেলনে বিভিন্ন পর্বে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সকল উপদেষ্টা, ক্যাবিনেট সেক্রেটারি, ডিপার্টমেন্টাল প্রধানসহ শীর্ষস্থানীয় ৫০ জন।

সম্মেলনে সরব ছিলেন ওবামার উপদেষ্টা পরিষদে একমাত্র বাংলাদেশি ড. নীনা। তিনি উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। জানার চেষ্টা করেছেন মূল সমস্যাগুলো। তার আহবানেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি এসেছিলেন । তারাও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন। সম্মেলন কেন্দ্রেই  উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সাথে কথা বলেছেন ড. নীনা। তাঁর সাক্ষাত্কারটি ২২ মে শুক্রবার প্রকাশিত ঠিকানা’র প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানে তা প্রশ্নোত্তর আকারে উপস্থাপন করা হলো।

 

প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানের প্রায় আড়াই হাজার এশীয় নাগরিক দিনব্যাপী নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন। এটিই কী এ সম্মেলনের মূল কথা?

 

ড. নীনা : না, এখানেই শেষ নয়। এটি শুধু মিলিত হওয়া বা মিলনমেলা নয়। এটি হচ্ছে এশীয়দের মধ্যকার বন্ধন দৃঢ়তর করার পথে শুরুমাত্র।

 

প্রশ্ন : এরপর কি?

 

ড. নীনা : আমাদের মধ্যে যে চেতনাবোধ আছে, কাজের প্রতি যে অদম্য বাসনা রয়েছে, তা যদি একত্রিত করতে পারি, তাহলে এমন সুফল আসবে, যা সকলকে অভিভূত করবে। অর্থাৎ ‘এশিয়ান-আমেরিকান এন্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার্স’ (এএপিআই) এর ব্যানারে সকলে যদি সম্মিলিত হয়ে কোন কাজ করি তাহলে তা খুব দ্রুত অগ্রসর হবে এবং সেটি হবে সকলের জন্যে শুভ। তিনি আরও বলেন, এমন একটি জোটের বিকল্প নেই। এসব দিক বিবেচনায় এই সম্মেলন হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার একটি সূচনা মাত্র। একে অবলম্বন করেই আমাদের এগুতে হবে।

 

প্রশ্ন : এশিয়ান আমেরিকানের সংখ্যা বর্তমানে ২ কোটি ৪০ লাখের মতো। সে অনুযায়ী আমাদের কংগ্রেসম্যান থাকার কথা ২৮ জন। কিন্তু রয়েছে মাত্র ১৪। এ অবস্থার পরিবর্তনে কি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

 

ড. নীনা : এখন থেকেই আমাদের যুব সমাজকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা দরকার। ক্যাপিটল হিল সম্পর্কে তরুণ-তরুণীদের ট্রেনিং নেওয়া দরকার অথবা ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করা উচিত। তাহলে তারা একটি পথ-নির্দেশনা খুঁজে পাবে যে, কীভাবে কংগ্রেসের আসনে জয়যুক্ত হওয়া যাবে।

 

প্রশ্ন : এ ব্যাপারে এএপিআই’র ভূমিকা নেই?

 

ড. নীনা : অবশ্যই, আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শুধু নর্থ-ইস্টে নয়, অন্য যেসব সিটিতে এশীয়রা রয়েছে, সেগুলোতেও এই ওয়ার্কশপ অথবা ট্রেনিং সেন্টারের প্রসার ঘটাতে হবে। এখন যেসব কংগ্রেসম্যান রয়েছেন, তাদের সাথে গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্নশীপের জন্যে যোগাযোগ করতে হবে। প্রত্যেকের উচিত তাদের সন্তানকে ক্যাপিটল হিল অথবা কংগ্রেসের ডিস্ট্রিক্ট অফিসে পাঠানো এবং কর্মশালা অথবা ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। ইতিমধ্যেই যারা মূলধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন তাদেরকেও এ ব্যাপারে সহায়কের ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ, কখন কোথায় কি হচ্ছে সে তথ্য তাদের কাছেও থাকে। সর্বোপারি এএপিআই হচ্ছে এসব তথ্য অবহিত করার বড় একটি অবলম্বন।

 

প্রশ্ন : বাংলাদেশিরা এ ব্যাপারে কোন খোঁজ-খবর নেন?

 

ড. নীনা : বাঙালিরা সকলেই তো রাজনীতিতে খুবই সক্রিয়। তবে সেটি হচ্ছে দেশীয় রাজনীতি। একইভাবে তারা যদি মার্কিন রাজনীতিতেও সম্পৃক্ত হতে পারেন, তবে সেটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। বাংলাদেশের জন্যে সত্যিকার অর্থে কিছু করতে হলে মার্কিন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরী। ক্যাপিটল হিলে যদি বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো তত্পরতা চালানো সম্ভব হয় তাহলে অনেক দাবি আদায় করা যাবে। ঠিক একই অবস্থা এদেশের কম্যুনিটির জন্যেও। অর্থাত্ অধিকার আদায়ের জন্যে সম্মিলিতভাবে কংগ্রেসে আওয়াজ তুলতে হবে এবং এজন্যেই এএপিআই ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।

 

প্রশ্ন : বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ব্যাপারে হোয়াইট হাউজের কোন ধারণা রয়েছে কি?

 

ড. নীনা : বাংলাদেশি-আমেরিকানদের অসাধারণ মেধা এবং কর্মনিষ্ঠার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ওবামা তথা হোয়াইট হাউজের সুন্দর একটি ধারণা রয়েছে।

 

প্রশ্ন : প্রবাসী বাংলাদেশীদের মূলধারায় আগ্রহী করতে আরো কোন পরিকল্পনা আছে কি?

 

ড. নীনা : গত ১১ মে এখানেই লিডারশিপ সামিট হয়েছে। সেখানে এসেছিলেন শিল্পোদ্যোক্তা এবং যারা আমেরিকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক ভালো করেছেন। তারা সকলেই এশিয়ান। বাংলাদেশিরাও ছিলেন কয়েকজন। সেখানে একটি ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কথা হয়েছে যে, বিশাল এই ভূখন্ডে সকলেই যে ভালো করছি, তা নয়। সকলেই হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাফল্য দেখাতে পারবে-এমন আশা করাও সমীচিন নয়। তবে যেসব কারণে সাফল্য আসছে না, সেগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশি-আমেরিকানদের আরো বেশি জানতে হবে, শিখতে হবে। লেখাপড়া করতে হবে। অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত রয়েছি, তবে এ দেশের সিস্টেম সম্পর্কে ধারণা কম। সে ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হবে। এটি দরকার প্রথম প্রজন্মের জন্যে। দ্বিতীয় প্রজন্ম অবশ্য অনেক ভালো করছে-এটি আমাদের জন্যে গর্বের ব্যাপার। লিডারশিপ সামিটে যারা অনেক সাফল্য দেখিয়েছেন সবাই তাদের অভিজ্ঞতা জেনেছি। সে অনুযায়ী অন্যেরা কাজ করবেন। এই সামিটে এসেছিলেন ১০০ জন। সবাই সবাইকে চিনতেন না। এখন পরস্পরের মধ্যে জানাশোনা হয়েছে। এভাবেই একে অন্যের সহায়ক হয়ে সম্মুখে এগিয়ে যাবেন বলে আশা করছি।

 

প্রশ্ন : এ সম্মেলনের প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো নিয়ে কি কোন এ্যাকশন প্ল্যান হবে?

 

ড. নীনা : সে পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সম্মেলনের সবগুলো সেশনের সারাংশ নিয়ে একটি এ্যাকশন প্ল্যান করা হবে। তৈরি করা হবে অগ্রাধিকার তালিকা। কারণ, সবকিছুতো একসাথে করা সম্ভব নয়। তাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এএপিআই কাজ করবে।

 

প্রশ্ন : এ সম্মেলনে কী কী বিষয় প্রাধান্য পেলো?

 

ড. নীনা : এশিয়ান-আমেরিকানদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সিভিল রাইটস ইত্যাদি। সবগুলো ইস্যুকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তারাই এতে বক্তব্য রেখেছেন। এটি ছিল এশিয়ান-আমেরিকান হেরিটেজ মান্থ উপলক্ষে সবচেয়ে বড় আয়োজন। আমি মনে করছি প্রেসিডেন্ট ওবামার এ উদ্যোগ সফল হয়েছে।

 

প্রশ্ন : কীভাবে?

 

ড. নীনা : কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রান্তের এশিয়ানদের সমাগম ঘটেছিল। সকলেই প্রাণ খুলে কথা বলেছেন। বিশেষ করে যে সব সমস্যায় তারা আক্রান্ত সেগুলো নিয়ে খোলামনে কথা বলেছেন। গৃহায়ন সমস্যা মোকাবেলায় কী করা উচিত তাও আলোচিত হয়েছে। কলেজ/ভার্সিটিতে শিক্ষা বৃত্তির ব্যাপারেও কথা হলো। স্বল্প আয়ের বাড়ির মালিকদের জন্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে। এ অর্থে বাড়ির লীড অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

 

প্রশ্ন : ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে কোন প্রকল্প নিয়ে কথা হয়েছে কি?

 

ড. নীনা : অবশ্যই। জাতীয়ভিত্তিক যেসব স্বেচ্ছোসেবী সংস্থা ইমিগ্র্যান্টদের ভাষা শিক্ষায় নিয়োজিত এবং আমেরিকান সমাজ-ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। সেগুলোর জন্যে অনুদান দেওয়া হয়। এসব সংস্থা থেকে পারিবারিক দাঙ্গার শিকার কিংবা পুলিশ কর্তৃক অহেতুক হয়রানির শিকাররাও সার্বিক সহায়তা নিতে পারে। এ ব্যাপারে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে এটর্নীর সহায়তাও নেওয়া যায়। কম্যুনিটিভিত্তিক সেবামূলক সংস্থার পাশাপাশি যে কোন প্রয়োজনে নিজ নিজ এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও ইমিগ্র্যান্টদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে থাকেন। সামগ্রিক অর্থে এ সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং বাংলাদেশীদের উচিত হবে প্রতিবেশী এশিয়ান-আমেরিকানদের (ভারতীয়, পাকিস্তানি, নেপালি, শ্রীলংকান, চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়ান, জাপানিজ) সাথে শখ্যতা গড়া এবং যে কোন দাবি আদায়ে এশিয়ান-আমেরিকান হিসেবে জোট গড়া। জোট যত সরব থাকবে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে মূলধারায় নাড়া দেওয়াও তত সহজ হবে।

– See more at: http://www.bd-pratidin.com/special/2015/05/23/83021#sthash.IjVJuL6g.dpuf

Leave a Reply