অং সান সু চি বললেন, তাঁরা সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় কাজ করছেন এবং তাঁরা তা চালিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে আমরা সেই সুযোগ চাই। ২০১৬-১৭–এর মত আন্ত-জাতিগত সংঘাত আবার শুরু হোক, এমন কিছু আমরা চাই না।’

13/12/2019 11:24 amViews: 3

আইসিজেতে শুনানির পর বেরিয়ে যান অং সান সু চি। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্সআইসিজেতে শুনানির পর বেরিয়ে যান অং সান সু চি। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্সমিয়ানমারের মংডো শহরে একটি ফুটবল ম্যাচে হাজির দর্শকদের ছবি দেখিয়ে অং সান সু চি বললেন, তাঁরা সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় কাজ করছেন এবং তাঁরা তা চালিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে আমরা সেই সুযোগ চাই। ২০১৬-১৭–এর মত আন্ত-জাতিগত সংঘাত আবার শুরু হোক, এমন কিছু আমরা চাই না।’

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানির তৃতীয় দিনে এবং মিয়ানমারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ বক্তা হিসেবে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর ও মামলায় দেশটির পক্ষে এজেন্ট অং সান সু চি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তাঁর দেশের সামরিক বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ না দিয়ে একে দেশের বাইরে বের করা (আন্তর্জাতিকীকরণ) উচিত নয়।

সু চি তাঁর চূড়ান্ত আবেদনে বলেন, গাম্বিয়ার মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক। এবং তার ফলে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও খারিজ করা হোক। সু চি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিয়ানমারেও সামরিক অপরাধের বিচার সামরিক বিচারব্যবস্থায় হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করে বলেন, বুথিডং দ্বিতীয় আরেকটি সামরিক আদালতে বিচার চলছে। ওই বিচার বাধাগ্রস্ত করা ঠিক হবে না।

সু চির বক্তব্যের পর আদালতের প্রেসিডেন্ট ইউসুফ জানান, যত শিগগির সম্ভব আদালত তাঁর সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষকে জানিয়ে দেবেন। তাঁর এই ঘোষণার মাধ্যমে এই শুনানি সমাপ্ত হয়েছে।

অধ্যাপক শাবাশ (মিয়ানমারের পক্ষে): ১৯৯৩ সালে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ক্ষেত্রে যে অন্তর্বর্তী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা অনেক উদার নীতি অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছিল। গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে সংকীর্ণ বা রক্ষণশীল অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ যৌক্তিক নয়। সেপ্টেম্বর ২০১৭-র ঘটনাবলির পরও লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারে রয়েছেন। তাঁদের গোষ্ঠীগতভাবে ধ্বংসসাধনের চেষ্টা হয়নি দাবি করে অধ্যাপক শাবাশ তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
গণহত্যার সংজ্ঞার বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সম্মেলনের আলোচনা তুলে ধরে অধ্যাপক শাবাশ বলেন, গণহত্যার সংজ্ঞায়িত খুবই সংকীর্ণ। এই ছবির যৌক্তিকতা সম্পর্কে অধ্যাপক শাবাশ প্রশ্ন তোলেন।

অধ্যাপক শাবাশ গাম্বিয়ার আইনজীবীরা আদালতে আজ একটি গ্রামের ১০ জন রোহিঙ্গার ছবি দেখিয়ে তাদের হত্যার কথা বলেছেন। গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণের জন্য ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর কথা বলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফেসবুকের একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করা হয়েছে যাতে দীর্ঘদিনের অসম্পন্ন বাঙালি সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে। এটিকেই সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ, ওই বক্তব্যে ক্লিয়ারিং অপারেশনের কোনো উল্লেখ ছিল না। বরং, সমস্যাটি সমাধানে সরকারের উদ্যোগের প্রতিফলন ঘটেছে। এটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নয়। অধ্যাপক শাবাশ ফেসবুক পেজের এই তথ্য ব্যবহারের বিষয়ে জাতিসংঘ তদন্তকারীরা সতর্ক ছিলেন না বলে অভিযোগ করেন। যৌন সহিংসতা খারাপ এবং সারা বিশ্বেই ঘটছে। বিদ্বেষ ছড়ানো বিষয়ে গাম্বিয়ার আইনজীবীরা ফেসবুকের একটি পেজের কথা বলেছেন। এটি ২০১৮ সালের রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃত।
অধ্যাপক শাবাশ জাতিসংঘ গণহত্যা নিরোধ দপ্তরের প্রণীত ফ্রেমওর্য়াকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সেটি প্রণয়নে আমিও অংশ নিয়েছি। তবে, এ ধরনের ফ্রেমওয়ার্কে যেসব লক্ষণের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতে জাতিসংঘের ওই দপ্তরের প্রধান, গণহত্যাবিষয়ক উপদেষ্টা গত ১৫ মাসে মিয়ানমার সম্পর্কে কিছুই বলেননি। মিয়ানমার কিছু তথ্য অস্বীকার করেনি বলে দাবি করেছেন গাম্বিয়ার আইনজীবীরা। আমরা জানতাম মামলার মেরিট নিয়ে এখানে শুনানি হচ্ছে না। সে কারণে আমরা ওই সব তথ্যের সত্যাসত্য নিয়ে আলোচনা করিনি। মিয়ানমার যে রিপোর্ট উদ্ধৃত করেছে, তা গত নভেম্বরের। দুই বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। ইউএনডিপির সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে যেগুলো হলে প্রত্যাবাসন সহজ হবে। এসব বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না।’
অধ্যাপক শাবাশ যুক্তিতে বলেন, নাগরিকত্বের প্রশ্নে অব্যাহত অস্বীকৃতির কথা ২০১৮ সালে যা বলা হয়েছে, ২০১৯–এর রিপোর্টেও একই কথা বলা হয়েছে। এখানে নতুন কিছু নেই। মৃত্যুর বিবরণ ২০১৮-তে ২০১৯-এর রিপোর্টের চেয়ে বেশি ছিল। অধ্যাপক শাবাশ জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী দলের উপসংহারের ওপর গাম্বিয়ার নির্ভরতার কথা বলেন। ‘জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট আমি যথাযথভাবে পড়িনি’ এমন ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

মিয়ানমারের আরেক আইনজীবী ক্রিস্টোফার স্টকার বলেন, অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার প্রশ্নে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণের যে দাবি জানানো হয়েছে, ওই ধরনের পদক্ষেপের প্রভাব কী হবে তা বিবেচনায় না নিয়ে তেমন নির্দেশনা দেওয়া যায় না। প্রত্যাবাসনের অবস্থা যা-ই হোক না কেন, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ রকম কিছু কাম্য নয় বলে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। এরপর বক্তব্য দিতে উঠেছেন অধ্যাপক শাবাশ।
গণহত্যা সনদের ৯ ধারায় বাংলাদেশ আপত্তি জানানোর কারণে গণহত্যার অভিযোগে মামলা করতে না পারলেও অন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ দেশটির রয়েছে। নির্যাতনবিরোধী সনদের আওতায় সেনেগালের মামলায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ছাড়া অন্য কারও মামলা করার অধিকার নেই বলে যে রায় আছে, সেই একই নীতি গণহত্যা সনদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। সনদের ৮ ধারার আওতায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বাংলাদেশ মামলা করার অধিকার রাখে। কিন্তু বাংলাদেশ মামলা করেনি। সনদের ৯ ধারার আওতায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও সনদের স্বাক্ষরকারী হিসেবে গাম্বিয়ার মামলা করার অধিকার এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক নয়। গণহত্যা সনদের ৮ ও ৯ ধারার ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করেন যে মিয়ানমার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ছাড়া অন্য কেউ এই মামলা করতে পারে না। আইসিজে সে কারণে এই মামলা নিষ্পত্তির এখতিয়ার রাখে না।

এই আইনজীবী বলেন, ‘ওআইসির তরফে মামলা করা হয়ে থাকলে তা চলতে পারে না বলে আমাদের যে দাবি, গাম্বিয়া তার কোনো জবাব না দেওয়ায় ধরে নেওয়া যায় দেশটি তা অস্বীকার করছে না। ওআইসির এ ধরনের মামলার অধিকার নেই। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই সনদের বাধ্যবাধকতার কথা বলতে পারত বলে আমরা আগেই প্রশ্ন তুলেছি। কিন্তু গাম্বিয়া এ ক্ষেত্রে গণহত্যা সনদের দায়িত্বপালনের দাবি জানানোর অধিকার রাখে না। গাম্বিয়াকে কারা অর্থ দিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। গাম্বিয়া নিজের অর্থে মামলা করছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।’ ওআইসির নথি উদ্ধৃত করে স্টকার বলেন, ওআইসির সিদ্ধান্তেই এই মামলা হচ্ছে। মামলার জন্য গাম্বিয়াকে কে বা কারা অর্থায়ন করছে, দেশটির আইনজীবীরা তা বলেননি। আদালতের প্রেসিডেন্ট ইউসুফের সভাপতিত্বে শুনানির শেষ পর্ব শুরু হয়েছে। গাম্বিয়া মিয়ানমারের যেসব যুক্তি খণ্ডন করেছে মিয়ানমার সেগুলোর প্রত্যুত্তর দেওয়া এবং নিজেদের দাবির পক্ষে সমাপনী বক্তব্য শুরু করছে। প্রথমেই বলছেন ক্রিস্টোফার স্টকার।

Leave a Reply